কলমের খোঁচা

মহান দার্শনিক ও নেতা কমরেড ভি আই লেনিনের 150 তম জন্মদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য


মাধবী ঘোষ :চিন্তন নিউজ:২২শে এপ্রিল:-
সিমবির্স্ক শহরের বর্তমান নাম হলো উলিয়ানভস্ক; রাশিয়ার সব চেয়ে বড় নদী ভলগার তীরে অবস্থিত এই সিমবির্স্ক শহরেই জন্ম হয় লেনিনের। সময়টা হলো ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল। পিতা- ইলিয়া নিকোলায়েভিচ ও তার মাতা হলেন মারিয়া আলেক্সান্দ্রভনা। তিনি ছিলেন এই উলিয়ানভ পরিবারের তৃতীয় সন্তান- যার নামটা ছিল , ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ । এটা ছিল লেনিনের আড়ালে পড়ে যাওয়া তার একমাত্র পিতৃদত্ত নাম। কিন্তু এখন বিশ্ব তাঁকে যে নামে চেনে পৃথিবীর ইতিহাসে তা হলো বিপ্লবেরই এক সমার্থক ধ্বনি বিশেষ-লেনিন; নিজের সংকল্প আর কৃতকর্মের গুণেই যিনি তা ই হয়ে উঠেছিলেন। বাস্তবিক অর্থেই তিনি তখন রচনা করেছিলেন মানবিক এক বিশ্ব।

লেনিন আসলে রাজনৈতিক মতবাদের ইতিহাসে ছিলেন মার্ক্স ও এঙ্গেলসের যোগ্য উত্তরসুরী; ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতিভা, সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, মহান মনীষী আর সেই সঙ্গে সহজ ও সবচেয়ে হৃদয়বান মানুষ- মানবজাতির কাছে এই হলো লেনিনের পরিচয়।’ (লেনিন; সংক্ষিপ্ত জীবনী, মস্কো) এখানে তাঁর এই মানবিক বিশ্ব রচনা করার তুলনা করা চলে কেবল তাঁর নিজের সঙ্গে বস্তুত বিপ্লবের যেকোনো সময়ের ইতিহাসে তাঁর এই প্রতিভাদীপ্ত কীর্তি হলো তুলনারহিত।

লেনিনের জন্ম হয় যেমন সিমবির্স্ক শহরে, তেমনি ওখানকার এক জিমনেশিয়ামে শুরু হয় তাঁর প্রাথমিক বিদ্যার পাঠ; নয় বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। তবে পরবর্তীতে প্রতিটি ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে গিয়ে প্রথম শ্রেণির পুরষ্কার প্রাপ্তি ছিলো তাঁর জন্য অবধারিত। বস্তুত বেড়ে উঠার এই সময়ে গড়ে উঠে তাঁর বিপ্লবী চরিত্রসমেত তাঁর রাজনৈতিক সবিশেষ দৃষ্টিভঙ্গী। এখানে পারিবারিক লালন পালন আর রুশ সাহিত্যের প্রভাবের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই আলেক্সান্দরের তৎকালীন জারবিরোধী ভূমিকা তো ছিলই। এর ফলশ্রুতি হলো সত্ত্বা লাভ করে এর চেতনা । এছাড়া বিপ্লবের রক্ত ছিলো যেখানে তাঁর উত্তরাধিকার সেখানে বিপ্লবী হওয়া ছাড়া তাঁর আর কিছুই হয়ে উঠা সম্ভব ছিল না। এই কৃতকর্মে লেনিনের হৃদয় ছিলো ইস্পাতকঠিন।

লেনিনের বাবা নিকোলায়েভিচ পেশায় যেমন ছিলেন একজন শিক্ষক, তেমনি চিন্তায়- প্রগতিশীল হলেও তিনি কর্তব্যে ছিলেন আদর্শনিষ্ট। তিনি মারা যান ১৮৮৬ সালে। কিন্তু বিপদ বা কোন সংকট কখনও একা আসে না। লেনিনের জীবনেও দেখা যায় পরবর্তী এক আঘাত;১৮৮৭ এর মার্চ মাসে পিটার্সবুর্গে গ্রেফতার হন তাঁর বড়ভাই- তাঁর আইডল-আলেক্সান্দর।

তৃতীয় জার হত্যা চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে একই বছরের মে মাসে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বাস্তবে তখনই নির্দিষ্ট হয়ে যায় লেনিনের পথ; জারের উচ্ছেদ, মেহনতি মানুষের মুক্তি এবং অবশ্যই লড়াইটা সমাজতন্ত্রের হলেও উপায়টা ছিলো আলেক্সান্দর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ‘না, আমরা ও পথে যাব না। ও পথে যাওয়া চলে না।’ লেনিন তাই জোর দিলেন তাঁর নিজের পথ বাস্তব অবস্থা ও পর্যবেক্ষণের উপর; বিশ্লেষণে ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণায়।

এবার রাজনৈতিক প্রস্তুতিপর্বের সঙ্গে তিনি মন দেন বিদ্যায়তনিক পড়াশোনায়; ১৮৮৭ সালেই তিনি আইন কোর্সে ভর্তি হন কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ছাত্রসভায় তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রসব করে এর ফল। ডিসেম্বরের দিকে গ্রেফতারপূর্বক লেনিন বহিস্কৃত হলেন বিশ্ববিধ্রালয় থেকে। আর নিজেকে সেই সময়েই তিনি পুরোটা ঢেলে দেন মার্ক্সবাদ অধ্যয়নে; বিপ্লবী রাজনীতির চর্চায়। যার মূলকথা এক সময় তিনি নিজেই লিখেছেন, ‘মার্ক্স ও এঙ্গেলসের বিশ্ব ঐতিহাসিক কীর্তি হলো এই যে, তারা সকল দেশের প্রলেতারিয়েতকে দেখিয়ে দিয়েছেন কী তাদের ভূমিকা, কী কর্তব্য, কী ব্রত; পূঁজির বিরুদ্ধে বিপ্লবী সংগ্রামে সর্বপ্রথম উত্থিত হতে হবে, সে সংগ্রামে নিজেদের চার পাশে সমস্ত মেহনতি ও শোষিতদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

বস্তুত এভাবেই যারপরনেই লেনিন হয়ে উঠেন প্রত্যয়সিদ্ধ পুরুষ; তত্ত্ববিশ্বে মার্ক্সবাদি হিসাবে তিনি নিজেই হয়ে উঠেন এর প্রাণঘন একজন প্রচারক। কেবল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ব্যবহারজীবীই নয়, এর বাস্তবিক প্রতিষ্ঠাতা হয়ে উঠেন তিনি। ১৯১৭ সালে মহান রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়, প্রতিষ্ঠিত হয় মেহনতি ও শ্রমজীবিদের, প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র; বাম রাজনীতি ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি- সোভিয়েত ইউনিয়নের।

বিপ্লবী লেনিনের এটা ছিলো অপরাজেয় বিপ্লবী কীর্তি। বিষয় হিসাবে যার তুলনা করা চলে রাজনীতির এক মহাকাব্যের সঙ্গে। প্রকৃতই বিপ্লবী হিসাবে লেনিন ছিলেন অপরাজেয় বিপ্লবী এক কৃত্যবিদ্য। আজ রুশ বিপ্লবের এই নায়কের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী; এই দিনে তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।লেনিন ভুমিষ্ঠ রক্তে ,ক্লীবতার কাছে নেই ঋণ,
বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন ##


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।