মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:১৫ই সেপ্টেম্বর:– পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী দেশ নরওয়ে। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ই নয়, একটি শান্ত, কম জনপদের রাষ্ট্র নরওয়ে। “মধ্য রাতের সূর্যের দেশ” নামে খ্যাত নরওয়ে বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের দেশ। সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের একটি অন্যতম তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশের নাম নরওয়ে। রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে দেশটি একটি রাজতান্ত্রিক দেশ বলেই এই দেশের অপর নাম নরওয়ে রাজ্য।
শান্তি ও সহাবস্থান নীতিতে বিশ্বাসী নরওয়ের সারাদেশে কনজার্ভেটিভ বা রক্ষণশীল পার্টি এবং লিবারেল বা বামপন্থী এই দুই দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। গত ২০১৩ থেকে একটানা রক্ষণশীল দলের নেত্রী অ্যারোনা সোলবার্গের নেতৃত্ব জোট নরওয়ের শাসনক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। দীর্ঘ আট বছর পর দেশের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল লিবারেল পার্টি তথা বামপন্থীরা গনতান্ত্রিক ভাবেই দেশের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলো। বামপন্থী নেতা জোনাসের যোগ্য নেতৃত্বে বামপন্থার এই জয় নিশ্চিত হয়।
নরওয়ের সংসদের মোট আসন সংখ্যা ১৬৯ । একক ভাবে মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ৮৫ টি আসন। এবারের নির্বাচনে জোনাসের দল মোট ১০০ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়তে সফল হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই নতুন লিবারেল সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠন করেছেন জোনাস।
এবারে বামপন্থীদের নির্বাচনী প্রচারের মূল বিষয় গুলি ছিল- নরওয়ের বৈচিত্র্যময় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রিপোর্ট। বামপন্থীরা কম ও মধ্য আয়ের মানুষের করের বোঝা কমিয়ে ধনীদের উপর উপযুক্ত কর চাপিয়ে দেশের অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষার কথা প্রচার করে। বামপন্থীরা গ্রামে বসবাস কারী মানুষের স্বার্থ রক্ষার বার্তা দেয়। বিশেষ করে জোনাসের লিবারেল পার্টির মূল শ্লোগান ছিল, তেল ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে দেশকে ধীরে ধীরে অন্যান্য বিষয়ে স্বনির্ভর করে তোলার বিষয়ে জোর দেওয়ার কথা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, গ্রীণ পার্টি নির্বাচনের আগে থেকেই তেলের খোঁজ বন্ধ রাখার দাবী তোলে।
মানুষের কথা ব’লে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে এনে অবশেষে লিবারেল পার্টি তথা প্রধানমন্ত্রী জোনাসের জয় হয়েছে। দেশের শাসনভার গ্রহণ করার পরই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রধান জোনাস বার্তা দিয়েছেন, তার সরকার নরওয়ের মানুষের জন্য একটি বিভেদহীন এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জোনাস আরও বলেছেন, অনেক প্রতীক্ষার পর নরওয়ে যে নতুন সরকার পাচ্ছে, তাতে তাদের ও যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। কাজেই মানুষ যাতে এক নতুন দিশা পায় তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।
দীর্ঘ আট বছর পর বামপন্থীদের এই জয়কে আরও অনেকের সঙ্গে বিশেষ অভিনন্দন জানিয়েছেন রক্ষণশীল দলের নেত্রী তথা বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী অ্যারোনা সোলবার্গ। এই নতুন সরকার বাস্তবে কতটা মানুষের আশা পূরণ করতে পারবে সে দিকে শুধু নরওয়ের মানুষ নয়, সমগ্র বিশ্বের নজর এখন নতুন বামপন্থী নরওয়ের দিকে।
নোবেল শান্তির দেশ, প্রায় বেকারত্ব হীন, নিরাপদ দেশ হিসাবে পরিচিত নরওয়ের শাসনে বামপন্থার জয় নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন। বিশ্বের সমস্ত বামপন্থী ভাবনার মানুষ, মানুষের কথা বলে, মানুষের জন্য কাজ করে, সমস্ত প্রকার রক্ষণশীলতা বিরোধী বামপন্থী নরওয়ে লিবারেল পার্টির নতুন শাসন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে রাজনৈতিক মহল এই আশা রাখেন।