শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে?সমাধান কি হ’তে পারে?


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৯ জুলাই: মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আছেন কবিগুরু। তার আত্মবিশ্বাস নিয়ে লিখতে বসলে প্রথমেই যেতে হয় বিশ্বকবির দরবারে “মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর-নিজেরে করো জয়।”

অনেক মানুষই নিজের উপর ভরসা রেখে ভয়কে জয় করেছেন। তারপর অনায়াসে এগিয়ে গেছেন সামনে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জে। নিজের উপর ভরসা রাখার নামই আত্মবিশ্বাস, আর এই আত্মবিশ্বাস মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সাফল্যের শিখরে। বিশিষ্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ শর্মিলা সরকারের কথায় জানা যায়, “নিজে কি করতে পারি আর কি করতে পারি না, এই ধারনার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় আত্মবিশ্বাস।” যে মানুষটি যত বেশী এই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা করতে পারেন তার আত্মবিশ্বাস ততটাই বেশী। আত্মবিশ্বাস হল একটা পজিটিভ ফিলিং। আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোন কাজ অনায়াসে করতে পারবেন। যদি কোন কাজ সাফল্যের সাথে করতে পারে মানুষের মন অজান্তেই পুরষ্কৃত করে আর এই পুরষ্কার পেলেই মন ভাল হয়ে যায়। আগামী দিনে এই কাজটাই আরও ভালভাবে করার চেষ্টা করবে মানুষ।

মূলত সেরোটনিন, ডোপলিন নামক নিউরো ট্রান্সমিটারগুলি আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আমাদের জীবনে প্রতিটি কাজ ভালভাবে সম্পন্ন করতে আত্মবিশ্বাসের দরকার পড়ে। সেটা রান্না করা হতে পারে, কারো ভালো লেখা, কারো ভাল বই পড়া ইত্যাদি হতে পারে। প্রতিটি কাজে দরকার আত্মবিশ্বাস। নিজের নিজের কাজে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এছাড়া সামাজিক দিক দিয়েও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।

ডাঃ সরকারের কথায় মানুষ একটি সামাজিক জীব। নিজেদের সম্পর্ক গুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান চালিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় অনেক মানুষ আর একটি মানুষের সাথে ভালভাবে কথাই বলতে পারে না। তিনি এবার বসে বসে ভাবতে শুরু করেন তার আপন লোকগুলি বুঝি তাকে পছন্দ করেন না। ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেন না। কাল্পনিক ধারনার মাঝে পড়ে আত্মবিশ্বাসহীন মানুষটি তার সামনে থাকা থাকা মানুষ গুলিকে নিজের ভাব বোঝাতে ব্যর্থ হন। এর ফলে তাকে সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়। একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ প্রতিটি কাজে নিজেকে পিছিয়ে রাখেন। তার প্রতিটি কাজ যেমন তার বসা, হাঁটা, কথা বলা-প্রতিটা বিষয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ওই ব্যাক্তি সর্বদা নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চান। অকারনে ঘামা, কথা বলতে গিয়ে তোতলান ইত্যাদি আত্মবিশ্বাস না থাকার লক্ষন। এছাড়া তাদের জামাকাপড় পরার ধরন দেখেও কিছু কিছু বোঝা যায়। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষের বেশভূষা হয় সুন্দর, মানানসই। তারা চুল-নখ ইত্যাদি বিষয়গুলিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। লোকটিকে দেখলেই মনে হয় লোকটি বেশ আত্মবিশ্বাসী। অপর দিকে আত্মবিশ্বাসহীন মানুষগুলি এসবের ধার দিয়েও যান না।

একজন মানুষ সবদিকে ভাল হতে পারে না। একজন লেখককে হঠাৎ করে রান্নাঘরে গিয়ে বিরিয়ানি রান্না করতে বলা হলে তিনি তা কখনোই করতে পারবেন না, কারণ তিনি এই কাজে পারদর্শী নন। যদি রান্না করার বদলে লেখার কাজ দেওয়া হত তাহলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজটি সম্পন্ন করতেন। কারণ তিনি লেখার কাজে আত্মবিশ্বাসী। এটা খুব সাধারন বিষয়। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা নিজের না পারার বিষয় গুলিতে খুব ভাল ধারণা রাখেন। তাই তাকে তার অপছন্দের কাজ দিলে তিনি তার অপারদর্শিতার কথা খুব সহজে সরাসরি বলে দিতে পারেন।

জন্মের সময় কেউ জাতি, ধর্ম ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে জন্মায় না। তেমন আত্মবিশ্বাস নিয়েও জন্মায় না। কিন্তু জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে কেউ আত্মবিশ্বাসী হন বা আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়েন। ডাঃ সরকারের কথায় আত্মবিশ্বাস গঠন একটা প্রক্রিয়া। একদম ছোটবেলা থেকে আত্মবিশ্বাস তৈরীর কাজটি শুরু হয়ে যায় মস্তিষ্ক এর ভিতর।
কোন বাচ্চা একটা কাজ করে প্রচুর প্রশংসা পেল আর তার মধ্যে তৈরী হল আত্মবিশ্বাস। আবার একটা বাচ্চা একটা কাজ ভালভাবে করতে পারল না, বকা খেল, বলা হল তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না। এর ফলে বাচ্চাটির আত্মবিশ্বাস কমে যেতে বাধ্য। এভাবেই গুটি গুটি পায়ে আত্মবিশ্বাস ভাঙ্গাগড়ার কাজ চলতে থাকে।

একদম ছোট বয়স থেকে বাচ্চার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করে দিতে হবে। মা, বাবা, ঠাকুমা, দিদা, দাদু, শিক্ষক, শিক্ষিকা, বন্ধুবান্ধব সকলকেই এর অংশ হয়ে উঠতে হবে।বাচ্চাদের সব কাজে উৎসাহ দিতে হবে। তার ভাল কাজগুলি খুঁজে নিয়ে প্রশংসা করতে হবে। এর ফলে বাচ্চাটির আত্মবিশ্বাস বাড়বে। প্রশংসা করার জন্য কোন বড় কাজ না খোঁজাই ভাল। ছোট ছোট কাজ যেমন গ্লাসে জল ভরে আনা, নিজের খাবার নিজে খাওয়া, কবিতা মুখস্থ করা ইত্যাদি কাজের জন্য বাচ্চার প্রশংসা করতে হবে। যতটা স্বম্ভব বাচ্চাকে খারাপ কথা বা খারাপ ব্যাবহার এড়িয়ে চলা উচিৎ। অনেক মানুষই ছোট থেকে এমন পরিবেশে মানুষ হন না। ফলে তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।