দেশ

টিকা নয়, কোন প্রতিষেধক‌ও নয়, করোনা রুখতে হাতিয়ার সীমান্ত প্রাচীর!


স্বাতী শীল: চিন্তন নিউজ:২৮শে এপ্রিল:–মানব সভ্যতায় পাঁচিলের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনও আব্রু রক্ষায়, কখনো সীমান্ত রক্ষার্থে, আবার কখনও বা সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে পাঁচিল ব্যবহার করা হয়ে এসেছে এখনো পর্যন্ত। কিন্তু করোনার আবহে পাঁচিলের এক অভূতপূর্ব ব্যবহার দেখল সারা বিশ্ব।

বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ এখনো অব্যাহত। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন বহুদিন। বর্তমানে আন্তঃ রাজ্য সীমানা বন্ধ করা হয়েছে।সংক্রমণ এড়াতে সীমান্তগুলিকে সিল করে দিয়েছে প্রায় সব ক’টি রাজ্য। করোনা সংক্রমণ রুখতে একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে প্রবেশ বা প্রস্থানের ক্ষেত্রে আরোপিত হয়েছে প্রচুর বিধি-নিষেধ। বিভিন্ন স্থানে বসেছে চেকপোস্ট। শুধু জরুরী পরিষেবার ভিত্তিতে সীমান্তে কিছু যান চলাচল অব্যাহত আছে। নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। কিন্তু এদিন সতর্কতার মাত্রা অতিক্রম করল তামিলনাড়ুর ভেলোর জেলা প্রশাসন। সীমান্তে পাঁচিল তুলে দিলো তারা।

পাশাপাশি দুটি রাজ্যের দুটি জেলা অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর ও তামিলনাড়ুর ভেলোর। দুটি জেলায় রাজ্যের মানুষের অবাধ আনাগোনা। চিত্তুর ও ভেলোরের সীমান্ত অঞ্চলে বহু তেলেগু ভাষী মানুষের বাস। বিভিন্ন প্রয়োজনে এক রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যের নিয়মিত যাতায়াত করেন। বিশেষত চিকিৎসার প্রয়োজনে চিত্তুরের মানুষ তামিলনাড়ুতে হামেশাই যান,কারণ তামিলনাড়ুর ভেলোর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শহর। বিশেষত ওখানে অবস্থিত ক্যান্সার হাসপাতাল এ অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বহু মানুষের যাতায়াত লেগেই থাকে। ভেলোরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বহু তেলেগু ভাষী পড়ুয়া রয়েছেন। এমতাবস্থায় রাতারাতি দুটি রাজ্যের সীমান্তে হাইওয়ের ওপর পাঁচিল তুলে দেওয়ায় কার্যত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে চিত্তুর জেলা তথা সমগ্র অন্ধ্রপ্রদেশকে আর এহেন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণটাই নেওয়া হয়েছে চিত্তুর জেলা প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে, তাদের কিছু না জানিয়ে এমনটাই অভিযোগ এসেছে চিত্তুর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে।

চিত্তুর এর জয়েন্ট কলেক্টর ডি মার্কেনদেযুলু জানিয়েছেন যে এই প্রাচীর তোলার বিষয়টি উপরমহলকে জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এমনিতেই কোন মানুষ বা যানবাহনকে ওই সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছিল না। এছাড়াও আন্তঃরাজ্য চেকপোস্টও রয়েছে ওখানে। এই অবস্থায় ওখানে এইভাবে আচমকা পাঁচিল তুলে দেওয়াটা অনৈতিক এবং অপ্রত্যাশিতও বটে।

অন্যদিকে ভেলোর জেলা প্রশাসনের তরফেও পাল্টা দাবি করা হয়েছে যে, জরুরী প্রয়োজন ভিত্তিক যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা খোলা রয়েছেই। লক ডাউন এর মধ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে যাতে আন্তঃরাজ্য প্রবেশ বা প্রস্থান না ঘটে সে বিষয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই এই পাঁচিল তোলা হয়েছে। ভেলোরের কালেক্টর এ শনমুগা সুন্দরাম বলেছেন যে, লকডাউন উত্তর সময়ে হাইওয়ের ওপর পাঁচিল আর রাখা হবে না। তা ঠিক ভেঙে ফেলা হবে।

এ প্রসঙ্গে বলতেই হয় যে, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু উভয় রাজ্যেই করোনার প্রকোপ যথেষ্ট বেশি। সোমবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে মারা গেছেন ৩১ জন এবং তামিলনাড়ুতে ২৪ জন। এক্ষেত্রে পাঁচিল তুলে করোনার প্রবেশ রোধের যে অভিনব প্রয়াস তামিলনাড়ু নিয়েছে,তা কতটা এবং আদৌ কার্যকরী হয় কিনা,সেটাই এখন দেখার বিষয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।