বিশেষ প্রতিবেদন: রত্না সর: চিন্তন নিউজ: ০৬/০২/২০২৪:– আর কয়েক মাস পরেই দেশের সাধারণ নির্বাচন। আবার মোদীর মুখে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও বিজেপি ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষকে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আজ সেগুলো অবশ্যই মনে করা প্রয়োজন।
সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা , ডলারের দাম চল্লিশ টাকা, পেট্রোলের দামও তাই , এসব কথার কথাই থেকে গেল। একটাও বাস্তবায়িত হল না। উল্টে মোদীর শাসনকালেই সার্বিক ভাবে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল সর্বনিম্ন। এই আর্থিক নিম্নগামীতার জন্য ‘কোভিড’ কে দায়ী করা যায় না, কারণ অতিমারি শুরু হওয়ার আগেই আর্থিক বৃদ্ধি নিম্নমুখী হয়েছিল। কোভিড শুরু হওয়ার আগের চারটি আর্থিক বছরের প্রতিটিতেই বৃদ্ধির হার ছিল তার আগের আর্থিক বছরের তুলনায় কম। দেশের আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১১-১২ সালে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রায় ৩৫ শতাংশ ছিল বিনিয়োগ। ২০২৩ সালে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি।বেকারত্বের হার আকাশছোঁয়া, বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে। পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের পরিসংখ্যান বলছে যে, স্নাতক বা তার বেশি শিক্ষিত যুবক যারা সরাসরি ভাবে চাকরি খুঁজছেন, তাদের প্রতি চার জনের মধ্যে এক জন কর্মহীন। আর্থিক অসাম্য বেড়েই চলছে।
২০১৭ সালের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার কনজিউমার এক্সপেন্ডিচার সমীক্ষার ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়া ফলাফলে জানা গিয়েছিল যে, গ্রামাঞ্চলে প্রকৃত ভোগব্যয় নিম্নমুখী। অন্য দিকে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। সবমিলিয়ে, মোদীর দশ বছর ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থাকে এক অতল খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মোদী সরকার একটা মেকি চিত্র খাড়া করতে চাইছে। যেমন – জি-২০-র সভাপতিত্বকে কেন্দ্র করে ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার একটা বয়ান তৈরি করল বিজেপি। অথচ, এটা সকলেই জানে যে সভাপতিত্বের দায়িত্ব ঘুরেফিরে সকল দেশই পায়, তারজন্য বিশেষ কৃতিত্বের প্রয়োজন হয় না। এই গোষ্ঠীভূক্ত ২০ টি দেশের মধ্যে একমাত্র ভারতেরই মাথাপিছু আয় সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের হিসেবে,মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ২০২৩ সালে বিশ্বের ১৯৫ টি দেশের মধ্যে ভারত ১৪৩ তম স্থানে। বিজেপি নেতৃত্ব দাবী করেন যে,ভারতের মত আর্থিক বৃদ্ধির হার আর কোন বৃহৎ অর্থব্যাবস্থার নেই। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের পরিমাণ দিনদিন কমিয়ে দিচ্ছে।শিক্ষাএবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জাতীয় আয়ের কণামাত্র খরচ ও তাতে যে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয় তা ওরা স্বীকার করে না।
সুতরাং মোদী সরকারের দশ বছরের শাসন শেষে যদি অর্ধসত্যের উপর বয়ান সাজাতে হয়,তাহলে দেশের কী অবস্থা তারা করেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অতএব, এককথায় বলা যায় যে,মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক কিন্তু দেশের মানুষ পেল সারবত্তাহীন ফাঁকা আওয়াজ। সেটা মোদী সরকার অস্বীকার করতে পারছে না বলেই , খোদ অমিত শাহ কে বলতে হয়েছে – “ওহ তো জুমলা থা” ।