মল্লিকা গাঙ্গুলী:চিন্তন নিউজ:২রা ফেব্রুয়ারি:– সম্প্রতি দেশের রাজধানীর রাজনীতি কৃষক বিক্ষোভে সরগরম। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী তিনটি কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে দেশের কৃষক সমাজ তীব্র আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। একদিকে সরকারের পক্ষে আন্দোলন রত কৃষকদের দমন করার নানান প্রচেষ্টা, অপর দিকে রুটি রুজির লড়াইয়ে একজেদি কৃষকদের মরণপন সংগ্রাম। ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যেই সীমান্তবর্তী রাজ্য গুলির শিশু- বৃদ্ধ -নারী- পুরুষ নির্বিশেষে কৃষকদের সপরিবার লড়াই সরকারকে টলাতে পারেনি। সারা দেশের অন্নদাতা কৃষক বিশেষ করে পঞ্জাব, রাজস্থান,হরিয়ানার কৃষকদের আন্দোলন-কর্মসূচির তীব্রতায় সরকার যথেষ্ট চাপে পড়েছে। রাজ্য সরকার গুলি নানা কৌশলে অবস্থান রত কৃষকদের সরানোর চেষ্টা ও করে চলেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী হরিয়ানার বিজেপি সরকার ১৭টি জেলার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকারের অবশ্য যুক্তি, রাজ্যের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাময়িক ভাবে নেট অফ রাখা হয়েছে। অপর দিকে হঠাৎ নেট সেবা বন্ধে কৃষক নেতৃত্ব প্রমাদ গুনছেন। তাঁরা মনে করছেন উত্তর প্রদেশের গাজীপুরের মতোই হরিয়ানার কৃষকদের অবস্থান হটানোর অভিনব কৌশল এই ইন্টারনেট বন্ধ। কিন্ত মরিয়া কৃষকরা মনোবল হারায় নি। হরিয়ানার ৩০০ গ্রামের ১৭ টি পঞ্চায়েত প্রধান খাটকার টোল প্লাজায় “মহা পঞ্চায়েত” গঠন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তাদের সরানোর চেষ্টা করলেই তারা মন্দিরের লাউড স্পিকার ব্যবহার করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে খবর পৌঁছে দেবে, এই ভাবেই তারা তিনশোটি গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতাকে ধর্ণাস্থলে জড়ো করবে।
ঝিন্দ জেলার ধাদন পঞ্চায়েত প্রধান আজাদ পল্বর বলেন, গাজীপুর পুনরাবৃত্তি হলেই তারা মন্দিরের মাইক ব্যবহার করে একত্র হবে, তবে সরকারের উচিত ছাত্র ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে নেট পরিষেবা চালু করা। পল্বর আরও বলেন তাদের ধর্ণায় কোনও দলীয় পতাকা ব্যবহার হবেনা । জাতীয় পতাকা এবং কৃষক আন্দোলনের নিজস্ব পতাকা তাদের প্রতীক। হরিয়ানার আন্দোলন কারী কৃষকরা বিজেপি এবং আর এস এস দল কে বয়কট করে ঐ দলের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত পরিবারদেরকেও বয়কটের ডাক দিয়েছে। হরিয়ানার মহাপঞ্চায়েত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যতক্ষণ না সরকার তিনটি কৃষি বিলই বাতিল করছে ততক্ষণ ই এই বয়কট ফতোয়া জারি থাকবে।
আগামী ৩ রা ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট কৃষক নেতা রাকেশ হরিয়ানার ঝিন্দ জেলায় সভা করে কৃষকদের মনোবল বাড়াতে আসছেন। তার আগমন কে কেন্দ্র করেই হরিয়ানার আন্দোলন কারীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জীবন জীবিকা বিপন্ন হলে কোনও বাধাই যে বাধা হয় না তার প্রমাণ এই কৃষক আন্দোলন। আধুনিক সংযোগ ব্যবস্থা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিলে ও তার বিকল্প পথ মন্দিরের মাইক কে হাতিয়ার করে তাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম তা কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছে। পরাধীন ভারতে ইংরেজ পুষ্ট জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কৃষক বিদ্রোহ ভারত ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল। আবার স্বাধীন দেশের ডিজিটাল ভারতের শাসক শ্রেণীর অমানবিক অনৈতিক কৃষি, কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতির উপর আঘাত কারী কৃষি আইন কে কেন্দ্র করে আর এক নতুন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে। এখনও সরকারের দেশের স্বার্থে জনগনের স্বার্থে নমনীয় হওয়ার সময় আছে। রাজনীতির সাথে যুক্তরাষ্ট্র মানুষেরা বলতে শুরু করেছে যে, এরপর হয়তো একবিংশ শতাব্দীর এই রক্তাক্ত কৃষক বিদ্রোহ সরকারকে ক্ষমা করবে না। কারণ ইতিহাস বলছে, কোনো ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থায় স্থায়ী হয় না।