দেশ

সুরাটের সিআইটিইউ এর ব্যবস্থাপনাতে বাড়ি ফিরলেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা_


সুপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:২রা জুন:- ডায়মন্ডহারবার এর সাকির মোল্লা সেলাই এর কাজ নিয়ে সুরাট গিয়েছিলেন মাত্র কয়েক দিন আগে।। তিনি ১৫ ই মার্চ সুরাট পৌঁছন আর তার মাত্র কয়েক দিন পরেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গোটা দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যায়।। পকেটে একটা পয়সাও নেই , খাবার নেই _ভেবেছিলেন এই যাত্রায় মরণ নিশ্চিত।। ডায়মন্ডহারবারের অনেক মানুষই সুরাট যান সেলাইয়ের কাজ করতে।।। লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার ফিরেও তাকান নি এই শ্রমিকদের দিকে।।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও কোন রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেন নি এই মানুষ গুলোর বাড়ী ফেরার ব্যাপারে।। কিন্তু তাঁরা বাড়ি ফিরলেন আর ফিরলেন সুরাটের সিআইটিইউ এর সচিব মনসুখ থোরাসিয়ার উদ্যোগে।।

গুজরাট সিআইটিইউ এবং পশ্চিম বাংলার সিপিআইএম রাজ্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির লাগাতার চাপে সাকির,নিসার দের মতো প্রায় পাঁচ ছ’শো বাঙলার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরলেন।তাঁদের চাপের কাছে মাথা নুইয়ে ওখানকার প্রশাসন একটা আস্ত ট্রেনের বন্দোবস্ত করতে বাধ্য হয়।। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন গুলোতে শ্রমিকদের মৃত্যু যখন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে ঠিক সেই সময় বাঙলার শ্রমিকদের জন্য ট্রেনের চাকা ঘুরলো মনসুখ থোরাসিয়ার নামে ।। নিসার জানিয়েছেন যে তিনি খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন যে অন্যান্য শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন গুলোতে আসার জন্য অনেক শ্রমিকদের প্রায় হাজার খানেক টাকা খরচ করতে হয়েছে কিন্তু সেখানে তাঁদের একটা পয়সাও খরচ হয়নি বাড়ি ফেরার জন্য।। উপরন্তু তাঁরা অনেক আরামদায়ক অবস্থায় বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন।। নাসির _সাকিররা জানিয়েছেন যে ট্রেন ছাড়ার দিন দুয়েক আগে তাঁদের একটা আবাসন এর মতো জায়গাতে রাখা হয় ।। খাবার দাবারের কোন অসুবিধা ছিল না।। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার জন্য সাবান শ্যাম্পুর বন্দোবস্ত ছিল।। ট্রেন ধরতে যাওয়ার দিন তাঁদের বাসে করে উধনা স্টেশনে আনা হয়।। বাসস্ট্যান্ড এ পার্টির লোকজন তাদের হাতে জলের বোতল,বোদের প্যাকেট , চানাচুর বিস্কুট ইত্যাদি দেন।। এর জন্যে তাদের কোন পয়সা দিতে হয়নি।।

বাগনানের কল্যাণ পুরের বাসিন্দা নিসার সুরাটে বাগান তৈরির কাজ করতেন প্রায় নয় বছর ধরে।। জানালেন ট্রেনে উঠার সময় তাঁদেরকে আবার জলের বোতল ও স্ন্যাকস এর প্যাকেট দেওয়া হয়।। তারপর ট্রেন ছাড়ার পর পার্টির লোকজন সমানে তাঁদের খবর নিয়েছেন এবং তাঁদের যাত্রা মজাদার করে তুলেছেন।। নিসার বললেন সুরাটে পার্টির মজিবুল ভাই সমানে তাঁদের ফোন করছিলেন।। প্রতিটি কামড়ার একজনের সাথে কথা বলে জানিয়েছেন কোন স্টেশন এ ট্রেন ঢুকছে।। ওই স্টেশন এ ট্রেন ঢোকার সাথে সাথেই পার্টির লোকজন সাধ্যমত কোথাও কলা_পাউরুটি আবার কোথাও খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছেন।। সেইসব খাবার তাঁরা ট্রেনে তুলে দিয়েছেন আর শ্রমিকরা সেইসব খাবার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খেয়েছে।। বাচ্চাদের জন্যও খাবার বন্দোবস্ত করেছিলেন তাঁরা।।ফোন বাজলেই তাঁরা হুল্লোড় করে উঠছিলেন আনন্দে।। কোথাও কোথাও আবার ফলের রস এবং নানারকম মুখোরোচক খাবার দিচ্ছিলেন তাঁরা।।

শুধু এতেই ক্ষান্ত হননি ।। তাদের বাড়ি ফিরে বেঁচে থাকার জন্য বস্তা বস্তা চাল ,ডাল,আলু পিঁয়াজ ইত্যাদি দিয়েছেন ।। প্রত্যেক মানুষের একাউন্টে আট হাজার টাকাও দিয়েছেন। নিসার সাকির রা জানিয়েছেন এই লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পার্টির লোকজন যেভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা তাঁরা জীবন থাকতে ভুলবেন না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।