দেশ

অসমে তৈরি হচ্ছে ভারতের নতুন ‘কারাগার’, থাকবেন কোন ‘বিদেশী’


মাধবী ঘোষ, চিন্তন নিউজ, ১৫ সেপ্টেম্বর: পরম মমতায় কখনো ভিতের বুকে, কখনো বা নিজের ঘাম ঝরিয়ে তৈরি দেওয়ালে হাত বোলান সরোজিনী। কখনো লাথি মারে আক্রোশে। নিজের হাতে নিজের জেলখানা তিলেতিলে তৈরি করছেন যে ! সইতে পারার মুখের কথা নয়।

পিছনে বইছে কৃষ্ণাই নদী। সামনে রাবার ক্ষেত। চারপাশে সবুজ গালিচা পার করে দূরের পাহাড়ের সারি। মাঝখানে ২০ বিঘা জমি জুড়ে গোয়ালপাড়ায় মাটি আই দলগোমা গ্রামে তৈরি হচ্ছে ভারতের প্রথম অনাগরিক আটক কেন্দ্র (অটল সেন্টার)। কাজ চলছে জোর কদমে আর কাজ করছেন যারা গোয়ালপাড়া ধুবুরী বরপেটা থেকে আসা সেই ৪৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে এনআরসি ছুট অনেকে, অধিকাংশ মহিলা।

অসম পুলিশ হাউসিং বোর্ডের তৈরি এই কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্র দাস অবশ্য জানান, নাগারে বৃষ্টি, বড় নির্মাণ সামগ্রী আনার মতো রাস্তা অভাবের ফলে কাজের গতি বাড়েনি। আগস্টেই এই কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশ। মেয়েদের অংশে ভিতই তৈরি হয়নি। ডিসেম্বরের আগে এখানে বন্দি রাখার ব্যবস্থা করা যাবে না। তার কথায়, “গুয়াহাটিতে থাকা কর্তারা বিশ্বাস করতে চান না গোয়ালপাড়ায় এত বৃষ্টি। বাধ্য হয়ে নিয়ম করে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে গিয়ে বৃষ্টির রিপোর্ট পাঠাই।”

আর বৃষ্টি ভেজা সরোজিনী মাথা থেকে বালি ভরা ডোঙ্গা নামিয়ে বলেন, “যদি শেষ পর্যন্ত ঘর ভেঙ্গে জেলেই পাঠাবে তাহলে আশ্রয় দিয়েছিল কেন? জেলে থাকতে আপত্তি নেই কিন্তু ছেলেমেয়েগুলোর কি হবে! বারবার শুনানিতে গিয়েছি। ওরা বলল, চিন্তা নেই। তাও শেষে নাম বাদই দিল। এখানে দিন হাজিরা বাদ দিয়ে আমার পক্ষে একা গোয়ালপাড়ায় ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে যাওয়া, মামলা করা, উকিল ধরা সম্ভব?”

নয়ন তারা হাজং বলেন, “এখানে সবাই মজা করে মেয়েদের নিয়ে। বলে নিজেদের জেল নিজেরাই বানাচ্ছিস। ভালো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিস। এসব এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। আমিতো এনআরসি তে নাম এসেছে কিনা দেখিনি। পাত্তা দিই না আর, যা হবে হোক।”

মোট পনেরোটা ব্লকে ২০০ জন গড়ে ৩০০০ জন বিদেশীকে ঠাঁই দেবে এই অনাগরিক আটক কেন্দ্র। তারা আদতে থাকেন জেলা কারাগারেই একটি অংশে। এ নিয়ে অনেক অভিযোগ। মানবাধিকার ভঙ্গের মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তবে দলগোমার কেন্দ্র শুধুই ঘোষিত বিদেশিদের জন্য। ভিতরে থাকছে প্রাথমিক স্কুল, হাসপাতাল, রান্না ও খাবার ঘর, বিনোদন কক্ষ। এমন আরও দশটি কেন্দ্র তৈরি হওয়ার কথা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।