দেশ

অশনিসংকেত!


রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ১৬ সেপ্টেম্বর: গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভের দুটি ইতিমধ্যেই ক্ষীন হয়ে এসেছে – একথা অনস্বীকার্য। জনসাধারণ বর্তমান শতকের প্রথম দুই দশকে এই সত্যের প্রভূত প্রমাণ পেয়েছেন। তৃতীয়টিই নাগরিক সাধারণের শেষ ভরসাস্থল। ব্যক্তি বা কোন জনগোষ্ঠীর দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য, সবলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আইনসঙ্গত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রতিকার আকাঙ্খায় রাষ্ট্রের সহায়তা পেতে যে বিচার ব্যবস্থা, তাই এখন নিহিত স্বার্থের আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেই বিশদ আলোচনা প্রসঙ্গান্তরে করা হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত (১৫.০৯.১৯) সংবাদটি নাগরিক সাধারণের কাছে অশনিসংকেত বৈ নয়। কিছুদিন আগেই একটি রাজনৈতিক দলের অতি উচ্চপদস্থ দুই সদস্য গ্রেফতার হন। তাঁরা এখন বিচারাধীন। বিচার প্রক্রিয়া মেনেই তাঁদের সম্পর্কে এই ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয় বলেই ধরে নিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট দলের এক মুখপাত্র প্রকাশ্য সংবাদ মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার পদস্খলন সম্পর্কে তাঁর অতিশয় দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করে এক বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতির অনুদিত অংশ বিশেষের উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় সংবিধানের ধারক ঐ তৃতীয় স্তম্ভটির উপর রূঢ় সমালোচনার আঘাত নামিয়ে আনাই তাঁর উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন (ভাবানুবাদ), “আমরা এযাবৎ আশা করে এসেছি যে এই দেশের ন্যায়াধিকার আইন ব্যবস্থার রক্ষক ও ধারক হিসাবে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করবেন। কিন্তু ইদানিং এই প্রতিষ্ঠানটির সময়মত সক্রিয় হয়ে বিচার-নির্দেশ দেওয়ার অভাব দেখা যাচ্ছে। এরকম ঘটনা অবিরল। সর্বশেষ জম্মু-কাশ্মীরকে ঘিরে অস্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ সেই দিকেই দিঙনির্দেশ করে।”

নাগরিকরা রীতিমত হতাশ। সংবিধান বেঞ্চ গঠিত হলেও, শুনানি শুরু হতে অস্বাভাবিক দেরী নানা প্রশ্নের অবতারণার সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক সময়েই বহু সমস্যা যেগুলি অত্যন্ত দ্রুত সক্রিয়তা দাবী করে সেগুলির ক্ষেত্রেও সময়মত সঠিক হস্তক্ষেপ হচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থার সরাসরি সমালোচনা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, চতুর্দিকে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের উপর নাগরিকরা নির্ভরশীল সেইসব প্রতিষ্ঠানগুলি, কোনো দল বা ব্যক্তি নয়, যদি নাগরিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, তবে গণতন্ত্রের উপরে যা হবে এক চরম আঘাত। আরো বিস্তারিত আলোচনায় ন্যয়াধিকারের উপর আস্থার অভাব প্রকাশ পায়। তিনি আরও বলেন, দেশে বিরোধী পক্ষ ও শাসক দলের জন্য কি দুরকম আইন আছে?

অনেকের মতে বিচারব্যবস্থার এইরকম প্রকাশ্য সমালোচনা প্রচার মাধ্যমে নিয়ে আসা নীতিবিরুদ্ধ। এতে গণতন্ত্রের পুষ্টি সাধন না হয়ে বরং জনসাধারনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা। বিচারব্যবস্থার কোনো অতিসক্রিয়তা বা নিস্পৃহতার প্রতিকার করার পদ্ধতি প্রচলিত আইনে খুব স্পষ্ট ভাবেই ব্যক্ত আছে। কাজেই, দায়িত্বশীল মহল সেই পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ ব্যক্ত করলেই সেটা সুস্থ ও স্বাভাবিক হয় এবং সঠিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয় বলে অনেকের অভিমত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।