কলমের খোঁচা

মানুষ গড়ার কারিগর নাদেজদা ক্রুপস্কায়া।


চিন্তন নিউজ,  কল্পনা গুপ্ত: ২৬ শে ফেব্রুয়ারি – যার কানে পৌঁছেছে কর্তব্যের আহবান, সে নির্ভীক প্রাণে ছুট্ব যায় জীবনকে তুচ্ছ করে। মৃত্যুর গর্জন তাঁর কাছে সংগীতের মতন। জার শাসনকালে রাশিয়ায় যখন ছাত্রদের কৃষক- শ্রমিকদের সাথে মেলামেশা নিষিদ্ধ ছিলো সেইসময়ে নাদেজদা ক্রুপস্কায়া খুবই গোপনে তাদের মধ্যে কাজ করতেন। তিনি পুঁজিবাদী শিক্ষাব্যবস্থার গোড়া উৎপাটন করে তরুণ, কিশোর,  শিশুদের গড়ে তুলেছেন সাম্যবাদী চেতনায়। তিনি তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমস্যা নিয়ে ভেবেছেন,  আলোচনা করেছেন, শিক্ষকদের পরামর্শ দিয়েছেন।

১৮৬৯ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি  রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন জার সরকারের সেনাবাহিনীর অফিসার। মায়ের ছোটবেলা কেটেছে অনাথ আশ্রমে ও জমিদার পরিবারের পরিচারিকা হিসাবে।  ১৮৬৩ র পোল্যান্ডের বিদ্রোহ দমনে তাঁর বাবাকে পাঠানো হলে তিনি বিদ্রোহীদেরই সহযোগিতা করেছিলেন। সেই অপরাধে জার সরকার তাঁকে বরখাস্ত করে। ক্রুপস্কায়া তাঁর মায়ের কাছ থেকে জমিদারদের অত্যাচার, নারী নির্যাতন,  তরুনীদের অসহায় অবস্থার শুনেছেন এবনফ যুদ্ধবাজ, অত্যাচারী জার সরকারের প্রতি ঘৃণায় পূর্ণ হয়েছেন।  তাঁর স্মৃতিকথায় বলেন যে, ” আমি বড় হয়ে মার্কসবাদী দর্শন দ্রুত গ্রহন করতে পারার কারণ হলো আমার মা বাবার প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি।  কমিউনিস্ট ইস্তাহার গ্রহণ করতে মনোবল জুগিয়েছেন।”

একসময় তিনি টলষ্টয়ের ভক্ত হয়ে ওঠেন। কৃষকদের সাথে একাত্ম হয়ে কৃষি শ্রমও দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমশ বুঝতে পারেন শ্রমিক কৃষকদের মুক্তির জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন।  ১৮৯৬ সালে সুতাকল, তাঁত শ্রমিকদের ধর্মঘটে তিনি নেতৃত্ব দেন ও গ্রেফতার হন। সাইবেরিয়ায় নির্বাসনকালে তিনি ভ্লাদিমির লেনিনকে বিয়ে করেন।

এইসময়ে নারীর উচ্চশিক্ষা গ্রহন, রাজনীতিতে অংশগ্রহন, ডাক্তারী পড়া নিষিদ্ধ ছিলো। এইসমস্ত আইন ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি সমাজে নারী অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন। ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের পর তিনি রুশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় লোকশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ১৯৩৪ সালে প্যারিসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে তিনি বিবৃতি দেন। ১৯৩৮ এর ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তিনি পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের নিপীড়িত নারীদের প্রতি আহবান জানান একটি সম্মিলিত ফ্রন্ট গিড়ে তোলার। ক্রুপস্কায়া ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের দায়িত্বশীল নারীমুক্তি পথের দিশারি।  তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে সমস্ত পশ্চাদপদ ভাবনা, অন্ধকার কুসংস্কারের বাঁধন ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে পারলেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। নারী আন্দোলনের পথ প্রদর্শক নাদেজদা ক্রুপস্কায়ার জন্মদিনে চিন্তনের পক্ষ থেকে জানাই অনন্ত শ্রদ্ধা।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।