কলমের খোঁচা

স্নেহের পরশ না ভন্ডামীর ছোঁয়ায়?


কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:১৯শে এপ্রিল:- করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শুধুমাত্র মানুষ নয়, আক্রান্ত অর্থনীতি। কঠিন এক পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এ লড়াই শুধুমাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত বা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে নয়, সংগঠিত ক্ষেত্রেও এক অনিশ্চয়তার আবহাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে যাই বলুন না কেন বাস্তব চিত্র ঠিক তার বিপরীত। কোম্পানীগুলোকে তার শ্রমিকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, নির্দেশ দেওয়া হয়নি। রুগ্ন শিল্পক্ষেত্রের মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া শুরু করেছেন। বৃহৎ কর্পোরৈট সেক্টরগুলোও বেতন সংকোচনের পথে, বিমান পরিবহন ও সংবাদমাধ্যম শিল্পও ভালোরকম ধাক্কা খেয়েছে।

লকডাউনে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আইনত রেশন ব্যবস্থা থাকলেও তা মেলেনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্ট অনুযায়ী সব পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত থাকার কথা রাজ্যগুলোর কাছে। কেরালার মত দু’ একটা রাজ্য বাদ দিলে সর্বত্রই অমিল এই নথি। শ্রমিকরাও বেশিরভাগ জানেন না এই আইনের কথা। ঠিকাদার মারফত অন্য রাজ্যে কাজে যান তাঁরা। ৮০% পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করেন দৈনিক মজুরিতে। লকডাউনে আটক ৭০% শ্রমিক পাননি কোনো রান্না করা খাবার, ৯৬% শ্রমিকের কাছে পৌঁছায়নি প্রয়োজনীয় রেশন, ৮৯% শ্রমিক বঞ্চিত তাঁর প্রাপ্য ন্যুনতম বেতন থেকে।

বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা সোস্যাল মিডিয়ায় তাঁদের সঙ্গত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বামশাসিত কেরালা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। বামপন্থী ছাত্র যুব, শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন জায়গায় বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। পাশাপাশি বাংলার শাসক দলের কর্মীদের পাশে পান নি কেউ ই। প্রবল চাপে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এই আটকে থাকা শ্রমিকদের পে টি এম ও মোবাইল এ্যাপ মারফত ১০০০ টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে। নাম দিতে পারদর্শী এই প্রকল্পের গালভরা নাম দিয়েছেন ‘স্নেহের পরশ’। জেলাশাসকের কাছে আবেদন করলেই মিলবে এই টাকা।

প্রশ্ন এখানেই। দিন আনা দিন খাওয়া এই মানুষগুলোর কজনের কাছে আছে স্মার্ট ফোন? কতজন জানেন এর ব্যবহার? কতজন ব্যবহার করেন গুগল পে? জেলাশাসকের কাছে অনলাইনে আবেদনই বা তাঁরা করবেন কীভাবে? প্রত্যেক দিন দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে যাদের কালঘাম ছুটে যায় তাদের কাছে এসব অকল্পনীয়। প্রকল্প ঘোষণা হবে, টাকা বরাদ্দ হবে, কিন্তু কতজন সেই প্রকল্পের আওতায় এসে সুবিধা ভোগ করবেন? প্রকল্প ঘোষণা আর রূপায়নের মধ্যে তফাৎ আসমান জমিন। আবার কিছু দিন পরে শুরু হবে নতুন কিছু চমক। এ পোড়া দেশে এইভাবেই পুনরাবৃত্ত হয় ইতিহাস।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।