শুক্লা ভৌমিক, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:– সংশয়ই সত্যের জনক – এমনটাই বলা হয়ে থাকে | প্রশ্ন ও বিতর্কের মাধ্যমে প্রশ্নের মীমাংসার ঐতিহ্য আমাদের দেশে বহু প্রাচীন | ন্যায়শাস্ত্রের নানান সম্প্রদায়ের মধ্যে তো বটেই , নানা দার্শনিক গোষ্ঠীর মধ্যে বিতর্কের ও যুক্তিসিদ্ধ কথোপকথনের চর্চা ভারতবর্ষে ছিলো |
বৈদিক যুগে ঋষি যাজ্ঞবল্ক ও গার্গীর মধ্যে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বহুশ্রুত বিতর্কসভার বিবরণ মেলে | কুমারিল ভট্ট , আদি শঙ্করাচার্য , নিমাই ওরফে শ্রী চৈতন্যেরও খ্যাতির অন্যতম কারন বিতর্কসভায় বিজয় লাভ |
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও তাঁর বইতে দেশের এই ঐতিহ্যটির ওপরে বিশেষ আলোকপাত করেছেন | গৌতম বুদ্ধের বক্তব্য ছিলো – “শুধুমাত্র শ্রদ্ধেয় কারো উক্তি বলে কোনো কিছুকেই অভ্রান্ত ধরা চলবে না , এমন কি তিনি গুরু বা শিক্ষক হ’লেও ! একমাত্র নিজে পরীক্ষা / যাচাই করে যাকে সত্য ও মানবসমাজের পক্ষে শুভপ্রদ বলে খুঁজে পাবে – তাকেই অবলম্বন করবে |
বিজ্ঞানমনস্কতা হলো সর্বদাই সব ধরনের আপ্তবাক্য , অমূলক বিশ্বাসের স্পষ্ট বিরোধী এবং তার মূল সুরটি হলো – সদা জাগ্রত জিজ্ঞাসু মন এবং প্রশ্ন করার ও প্রশ্নের সম্মুখীন হবার অধিকারের স্বীকৃতি | অন্যদিকে কুসংস্কার ও তার প্রচারকরা সর্বদাই দাবি করে – এগুলি প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নাও এবং নিঃশর্তভাবে নিজের চিন্তাশক্তিকে সমর্পণ করো কোনো সর্বশক্তিমান সর্বনিয়ন্তার পাদপদ্মে | বেশির ভাগ দেশ ও কালে কুসংস্কার , অলৌকিক শক্তি বা যাদুবিদ্যায় বিশ্বাস ও ধর্মীয় নানা অনুশাসন হাত ধরাধরি করে চলতে থাকে এবং এখনো পর্যন্ত এসবের প্রভাব যথেষ্ট | শিক্ষিত সমাজের সিংহভাগের এমন অলৌকিক শক্তি , তন্ত্র মন্ত্র –যাদু ইত্যাদির ওপরে নিঃশর্ত বিশ্বাস থাকার ফলে নানা গোষ্ঠীর বাবাজী , মাতাজী , গুরুজীর রমরমা ও প্রবল প্রতাপ ! তাঁদের অনেকে দেশের প্রায় কোনো আইনের তোয়াক্কা করেন না এবং নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে ঠকিয়ে থাকেন |
এদেশে “ নজর লাগা “, সুলক্ষণ – কুলক্ষণ , বন্ধ্যা বা বিধবা নারী অশুভ – অলক্ষণ ইত্যাদি নানা কিছু প্রচলিত যুগ যুগ ধরে | এগুলিকে জবরদস্তির মাধ্যমে দূর করা প্রায় অসম্ভব | আমাদের বেশির ভাগ মানুষের জীবনধারার মধ্যে , দৈনিক চর্চার মধ্যে সর্বত্র বিজ্ঞানমনস্কতা , মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদের সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ ঘটাতে পারলে , তবেই ধীরে ধীরে ক্রমে কুসংস্কারের পরিসর কমতে থাকবে | সত্যান্বেষীদের এই দীর্ঘায়ত চলমান সংগ্রামের চরিত্র ও গতিপথের ওপরেই হয়ত এই দ্বন্দ্বের পরিণতি নির্ধারিত হতে থাকবে |
তথ্যসূত্র :
1) Amartya Sen, The Argumentative Indian
2) SUBHASH KUMAR & NOKLENYANGLA,
“ Scientific Temper & Superstitions”, Journal of Scientific temper