প্রতিবেদন:-ডা: স্বপ্না চট্টরাজ,আসানসোল:: চিন্তন নিউজ:২১শে সেপ্টেম্বর:-১৯০৬সালে জার্মান মনোচিকিৎসক ডাঃ আলোইস আলঝেইমার (Dr. Alois Alzheimar) ৫০ বছরের এক জার্মান মহিলার ভুলে যাওয়া রোগের চিকিৎসা করেন এবং ওনাকে সুস্থ করে তোলেন। তাই চিকিৎসকের নামানুসারে এই রোগের নাম দেওয়া হয় আলঝেইমার (Alzheimar) । ১৯৯৪ সালে ২১শে সেপ্টেম্বর তারিখ টিকে বিশ্ব আলঝেইমার্স দিবস (World Alzheimer’s Day )ঘোষণা করা হয়। ২০২১সালের এই রোগটির থিম হলো “Let’s talk about dementia”.বিশ্বজুড়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ও এই রোগ সম্পর্কে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়াই হলো এই দিবসের উদ্দেশ্য।
২০০৬সালে২কোটি৬৬লক্ষ লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রতি ৮৫জনে ১জন হবে। ভারতবর্ষে এই রোগের শিকার ৪লক্ষের চেয়ে বেশি। এটি একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা।
আলঝেইমার এক ধরনের রোগ যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৬৫বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন। কিন্তু এর প্রারম্ভিক সুত্রপাত অনেক আগের থেকে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি খুব দূর্বল হয়ে পরে। তার সাথে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয় না। ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন ধীরে ধীরে অবনতি হতে দেখা যায়। এই রোগের শুরুর দিকে আক্রান্ত ব্যক্তি নাম মনে রাখতে পারেন না। সাম্প্রতিক ঘটনা সমূহ মনে রাখতে পারেন না কিন্তু অতীতের ঘটনা (যা স্বাভাবিকভাবেই মনে থাকে না) এর পূর্ন স্মৃতি চারণ করেন। ধীরে ধীরে আরো কিছু সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যেমন-চিন্তাধারার সমস্যা, আচরণে অসামঞ্জস্য, কনফিউশন, কথা বলতে গেলে সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া, এক বক্তব্য থেকে আর এক বক্তব্যে চলে যাওয়া, বিড়বিড় করা , রাস্তায় বেরিয়ে নিজের বাড়ির রাস্তা হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি। ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়া কর্মের বিলুপ্ততা দেখা দেয় ও অবশেষে মারা যান।
এবার দেখা যাক কি কি কারনে এই রোগ হয়:-
১-হাইপোথাইরয়েডিজম
২-ভিটামিন বি-১২এর অভাব
৩-Lyme disease বা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সংক্রামিত রোগ নিউরোসিফিলিস ( Neurosyphilis)
৪-মস্তিকের কোনো আঘাত
৫-ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা
৬-ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
৭-অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি এই রোগের কারণ হলেও মূলতঃ মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ নষ্ট হয়ে গিয়ে রোগী মারা যান।
এই রোগ প্রতিরোধ করবো কী ভাবে:-আসলে এই রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কিভাবে রিস্ক ফ্যাক্টরকে কমিয়ে আনা যায় বা প্রতিরোধ করা যায় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বা কি কি খেলে মস্তিষ্কের কোষগুলি সতেজ থাকবে সেই ধরনের খাবার খেতে হবে।
এবার দেখা যাক আমরা কি খাবার খাবো:-
১- দিনে খাবারের তালিকায় লাল আটা, লাল চাল, ভূট্টা, গম, ওটস, হোল গ্রেইন পাস্তা, পপকর্ন- এই পূর্ন শস্য যুক্ত খাবার রাখতে হবে।
২-সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, টুনা, ম্যাকরেল বা যার মধ্যে ওমেগা ৩ আছে, এগুলো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। সপ্তাহে অন্তত দুদিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত।
৩-শিম ও শিমের বীচি-স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এতে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে।
৪-সবুজ শাক বিশেষ করে পালংশাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শালগম, এগুলো বেশি করে খেতে হবে। এতে প্রোটিন, ফাইবার, ফলিক আ্যসিড,ভিটামিন- ই, বিটা ক্যারোটিন এবং পলিফেনলস রয়েছে।
৫-স্যালাড-দিনে একবার স্যালাড খেলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
৬-বাদাম-স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাদামের জুরি নেই সপ্তাহে অন্তত ৫দিন বাদাম খেতে হবে।
৭-অলিভ অয়েল-রান্নার কাজে ও স্যালাডে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে স্মৃতি শক্তি বাড়ে।
কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না:-
১-রেড মিট, মিষ্টি জাতীয় খাবার
২-ফাস্ট ফুড, তৈলাক্ত জাতীয় খাবার সপ্তাহে একদিনের বেশি খাওয়া যাবে না।
আলঝেইমার রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের রোগীর প্রতি যত্ন শীল হতে হবে। আপনজনের স্নেহ ভালবাসা এই রোগে অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ একটা সময়ে গিয়ে রোগী খাওয়া, ঘুম, শারীরিক যত্ন নিতেও ভুলে যান। তখন অন্যের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়ে পরে। তাদেরকে পরিচর্যা করতে হবে একেবারে বাচ্চাদের মতো করে। আর বাড়ি থেকে বেরোলে অবশ্যই বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর কাগজে লিখে দিতে হবে। কারন রোগী নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যান। আসুন আমরা সবাই মিলে এই রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করি। এই হোক আজকের দিবসের অঙ্গীকার।