সুপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১৯শে মে:- ভারতবর্ষ এগোনোর বদলে বহু বছর পিছিয়ে যাওয়ার রাস্তায়।। মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালিয়েছে মহাজন কুল যাদের হাতে টাকা ও ক্ষমতা ছিল।। ভারতবর্ষের বেশীরভাগ মানুষই গরীব।। আর সেই অবস্থার সদ্ব্যবহার করতে পিছপা হতো না মহাজনরা।।
আজকের এই দূর্দিনে যখন গোটা বিশ্ব জুড়ে আর তার সাথে ভারতবর্ষ ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিপর্যস্ত ,লকডাউন এর জেরে বহ মানুষ পেটের দায়ে অন্য রাজ্যে কাজের জন্য গিয়ে আটকে রয়েছেন, খাওয়া নেই ,ঘর নেই,পয়সা নেই সেই অবস্থায় পরিবার সমেত মাইল এর পর মাইল হেঁটে বাড়ী আসার চেষ্টা করছে , কেউ ফিরতে পারছে কেউ রাস্তায় অসহায়ের মতো পড়ে মরছে।।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে ছয় পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এক্সিডেন্টে। কিন্তু বাড়ী ফেরার পর তাঁদের পেট চলবে কি করে? কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন প্রচুর টাকার আর্থিক প্যাকেজ।। কিন্তু পরে জানা গেল ওই টাকা অনুদান নয় _ঋণ। ভারতবর্ষের মানুষ যারা চরম বিপাকে পড়েছে তাদের কোন সাহায্য করছে না ঋণের জালে জড়াতে চাইছেন।। ঠিক মহাজন দের মতো।। ওরাও ধার দিত তারপর কিছুদিন পর ঋনগ্রস্থদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে তার দখল নিতো।।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারকেই অনুসরণ করছেন বলে খবরে প্রকাশ।। শুধু পরিযায়ী শ্রমিক না পশ্চিমবঙ্গের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলো ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই সঙ্কট কালে।। তাদের এখন টাকার প্রয়োজন।। এই গোষ্ঠীর জন্য পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ব্যাঙ্ক গুলো কে নির্দেশ দিয়েছেন যে এই গোষ্ঠীগুলোর জন্য কোন অনুদান নয় একলক্ষ টাকা করে ঋন যেন তাদের একাউন্টে দেওয়া হয়। ঋনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৬৮ হাজার।। এখন জানা যাচ্ছে যে প্রায় ৬১ হাজার গোষ্ঠী র কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ই নেই।। কৃষকদের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশী ।।। বোরো চাষের ক্ষতি হয়েছে।। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার তাদের জন্য কিছু অনুদান ঘোষণা করে নি।। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন যে কৃষকরা যাতে নিজের ধান নিজেরাই বিক্রি করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।। কিছুদিন এর মধ্যে “কৃষক বন্ধু” প্রকল্পের টাকাও দেওয়া হবে।। কিন্তু কৃষক বন্ধু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৫০০/-। রাজ্য সরকারের খাতায় যত কৃষক দের নাম নথিভুক্ত করা আছে পশ্চিমবঙ্গে কৃষক সংখ্যা দ্বিগুণ এর বেশী।
তার মানে যারা নথিভুক্ত নয় তারা কোন সহায়তা রাজ্যের থেকে পাবে না। করোনা জনীত যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য এই কৃষক রা কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না আর এদের নিয়ে রাজ্যসরকারের অদূর ভবিষ্যতে কোন চিন্তা ভাবনাও নেই।। তবে কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভাবছেন যে এই করোনা আবহে এই কৃষক কুল দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ধান বিক্রি করতে যাবে? ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পতেও ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে। এই ছোট ও মাঝারি শিল্পতেও প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থান করা সম্ভব।। কিন্তু এই বিষয়েও রাজ্যের সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।। অর্থমন্ত্রী এদের ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋন দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।। কিন্তু ঋণ নিলে এরা সময় এর মধ্যে টাকা শোধ করবে কি করে? সুদ গুনতে গুনতেই এরা শেষ হয়ে যাবে। এই ঋণ প্রদান করা নিয়ে যে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হচ্ছে তাতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। ঋণের বোঝাতে গরীব মানুষ গুলো মারা যাবে নয় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে। এদের এখন ঋন নয় অনুদান প্রয়োজন। এটা আর কবে বুঝবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার?