কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ:১৯শে মে:- কোভিড১৯ মোকাবিলায় কেন্দ্রের ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজে নেই কোনো করোনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়েনি এক টাকাও। বিশ্ব তালিকায় নীচের দিকে থাকা ভারতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ মাত্র ০’৭%. মহামারীর সঙ্গে অসম যুদ্ধে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বরাদ্দ বাড়বে এমন আশায় জল ঢেলে দিল মন্ত্রী নির্মলা সীতরামনের প্যাকেজ। ভারতের মোট হাসপাতালের ৯৩% ই বেসরকারি, চিকিৎসকের মাত্র ১৫%থেকে ২০% সরকারি হাসপাতালে কর্মরত।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়াই এক অসম লড়াইয়ে সামিল হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের সিংহভাগই করোনা রোগীদের ফিরিয়ে দিয়েছে নয়তো বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মিলেছে পরিষেবা। বন্ধ হয়ে গেছে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা, রাজ্যে এখন সাধারণ কোনো অসুখ হ’লেও চিকিৎসক অমিল। সংক্রমণের কবলে একাধিক চিকিৎসক, নার্স, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। এরকম এক সময়ে গত দু’দিনে প্রায় ৬০০ নার্স রাজ্য ছেড়েছেন। আমরি, আর এন টেগোর, ফর্টিস, বেলভিউ, আইরিশ, মেডিকা, পিয়ারলেস সহ বহু হাসপাতালে নার্সের এক বড় অভাব দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষার অভাব কোভিড রোগীর কাজ করতে রাজি নন তাঁরা। জীবন বাজি রেখে চাকরি করতে অপারগতার কথা তাঁরা জানিয়েছেন। অনেকেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কেউ বা অনির্দিষ্টকালের ছুটির আবেদন করেছেন, ভবিষ্যতে ফিরবেন কিনা অনিশ্চিত।
মেডিক্যাল কলেজে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে কোনো চিকিৎসা না পেয়ে, স্বাস্থ্যকর্মীরা সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছেন। সুপার স্বীকার করেছেন এই অচলাবস্থা। বাঙ্গুর হাসপাতাল নিয়েও চরম ক্ষোভ, অভিযোগ উঠেছে। অ্যাম্বুলেন্স চালকরাও সুরক্ষা পোশাক না থাকায় রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
মূর্খামির প্রতীক মুখ্যমন্ত্রীর নয়া ফরমান সাতদিনের প্রশিক্ষণে নার্সিং সহায়িকা তৈরী করা, তাঁরাই নাকি রোগীকে ঔষধ, ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, অক্সিজেন দিতে পারবেন। অসুবিধা হলে ভিডিও কলে করণীয় কী জেনে নেবেন। সত্যিই যদি সাতদিনের প্রশিক্ষণে পেশাদার নার্স তৈরী করা সম্ভব তাহলে তিন বছর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো না। অর্বাচীনের মত এরকম মন্তব্য কোনো মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোভা পায় না। আসল কথা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক শূন্যতা সৃষ্টি হল।
বর্তমান জরুরী অবস্থায় ১৬০ জনেরও বেশি চিকিৎসক, নার্স করোনায় আক্রান্ত, কোয়েরেন্টাইনে আরও বেশি, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এমতাবস্থায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও রোগীর পরিবারকে, সুচিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বাড়ছে। কোনো রসিকতা নয়, সরকারকেই ভাবতে হবে কীভাবে এই ৬০০ নার্সের ঘাটতি মিটিয়ে সংকটের সমাধান করা যায়।