দেশ

গুজরাটে চরম দূর্দশায় পরিযায়ী শ্রমিকরা



সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:২৩শে এপ্রিল:- গুজরাটে পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম দূর্দশা। মানুষ এই করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে কি ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়েছে যাদব গগৈ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।। আর্থিক অনটনের কারণে মাত্র ৬ মাস আগে মোদীর রাজ্য গুজরাটে গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে।। ওখানে কিছুদিন পর এক ডেলিভারি বয়ের কাজ পান।। ভালোই চলছিল কিন্তু এরই মধ্যে করাল করোনা ভাইরাসের আক্রমণ।। আর তার জেরে শুরু হয় লকডাউন।। সমস্ত গাড়ী বন্ধ হয়ে যায়।। যাদব গগৈয়ের অফিসটাও বন্ধ হয়ে যায়।।

গত কয়েক বছর ধরে গুজরাটের নানারকম উন্নতির গল্প শুনে যে যাদব গুজরাটে গিয়েছিলেন চোখের সামনে অকস্মাৎ নগ্ন হয়ে গেল।। কাজ নেই, পকেটে পয়সা নেই, ঘরে খাবার নেই, এক ভয়াবহ সঙ্কটের সামনে এসে দাঁড়ান যাদব গগৈ।। ঠিক করেন যেভাবেই হোক তাঁকে তাঁর বাড়ীতে ফিরতে হবে।। তাঁর বাড়ী আসামের গুয়াহাটিতে।। ফিরবেন তো ফিরবেন কিসে? যানচলাচল বন্ধ।। অতএব শুরু হাঁটা।। কম দূর তো নয়।। টানা ২৫ দিন ২৯০০ কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে বাড়ী ফেরেন।।

যাদব গগৈয়ের স্ত্রী জয়শ্রী গগৈ জানালেন অবশেষে তার স্বামী বাড়ী ফিরেছেন গুজরাট থেকে।। বাড়ীতে তিনি স্বামীর অবর্তমানে দুটো বাচ্চা নিয়ে থাকতেন।। যখন জানলেন তাঁর স্বামী গুজরাট থেকে হেঁটে বাড়ী ফিরছেন তখন দুশ্চিন্তাতে তিনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।। যাদব গগৈয়ের কাছে ফোনও নেই যে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।। বাড়ীতে বসে দুশ্চিন্তা করা ছাড়া আর কিইবা করার ছিল তাঁর।।

যাদব গগৈ বাড়ীতে ফিরে জানিয়েছেন বাস্তব এর গুজরাট কি? জানিয়েছেন যে তিনি যদি এই লকডাউন পরিস্থিতিতে তিনি যদি গুজরাটে থাকতেন তাহলে তাঁকে না খেয়ে মরতে হতো।। আরও জানান সরকারের থেকে তিনি কোনরকমের সাহায্য তো পানইনি স্থানীয় প্রশাসন থেকেও কোনরকম সাহায্য পান নি।। লকডাউন ঘোষণা হবার পর যে চরম দূর্ভোগে পড়েন সেইসময় যাদবের পরিচিত আর এক পরিযায়ী শ্রমিক রাকেশ কুমার বাড়ী ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন।। রাকেশ বাবু থাকেন উত্তর প্রদেশের বারানসীতে।।একটি লরি করে রাকেশ ও যাদব রওনা দেন বারানসীর উদ্দেশ্যে।।

তারপর গত ১৩ ই এপ্রিল হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় এসে দেখেন কিছু মানুষ বিহু পোশাক পড়ে যাচ্ছে।। যাদব গগৈ বুঝতে পারেন তিনি তাঁর নিজের রাজ্যে চলে এসেছেন।। এইসময় শ্যালককে ফোন করেন এবং রাজেন ফুকন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর সাথে যোগাযোগ করে যাদবকে নগাঁও হাসপাতালে নিয়ে আসে।।খবর পেয়ে যাদবের স্ত্রী ও সন্তানরা ওই হাসপাতালে চলে আসে ।। সেখানে যাদবের করোনা পরীক্ষা করে যানা যায় তার করোনা সংক্রমণ ঘটেনি।।

অবশ্য তাঁকে এখন বেশ কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।। যাদবের স্ত্রী জয়শ্রী গগৈ জানিয়েছেন তিনি তাঁর স্বামীকে ফিরে পেয়েছেন এটাই সবথেকে বড় কথা আর গুজরাটের উপর থেকে তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে।। জানিয়েছেন যে করে হোক এবার থেকে নিজস্ব জায়গাতেই যেমন করে পারেন থাকবেন।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।