কলমের খোঁচা

পরিযায়ী শ্রমিক ও মার্কসবাদ,– তরুণ মালী


চিন্তন নিউজ:৫ই মে :- -আজ ৫’ই মে। পৃথিবীর মহান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, সমাজ বিজ্ঞানী ও মানব ইতিহাসের মুক্তিকামী মানুষের পথিকৃৎ কার্ল মার্কসের ২০৩’তম জন্মদিন।

আজ যে কথাটা বলার জন্য কলম ধরার চেষ্টায় ব্রত হলাম। তাও আবার মার্কসবাদকে নিয়ে। সত্যিই আমার কাছে এক দুঃসাধ্য কাজ। ত্রুটি মার্জনীয়।

কভিড ১৯ ! করোনা ভাইরাস।

আজ সমগ্ৰ পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের মানুষ এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতির জন্য দিশাহীন। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল আমাদের কে শিহরিত করে তুলছে।

অস্বীকার করার উপায় নেই আমাদের দেশ ভারতবর্ষ এই কঠিন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্ত নয়।

আমরা ২৫’শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারি এই করোনা ভাইরাস-এর ভয়াবহতা।

আজ লক-ডাউন ৪৩ দিন অতিক্রম করলো। এই নয় যে শুধুমাত্র আমাদের দেশেই লক-ডাউন চলছে। তাই এই লক-ডাউন কে সব স্তরের মানুষ অনান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেশের আপামর জনসাধারণ প্রয়োজনীয় মনে করেছেন। মেনে চলছেন।

কিন্তু শুধুমাত্র লক-ডাউন কি এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে? তাহলে বিকল্প কি?

কিন্তু যে প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। পরিযায়ী শ্রমিক।

আমাদের দেশে প্রতিটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে নিজের ও নিজেদের পরিবারের জন্য কাজ করতে যান। যাদের আমরা পরিযায়ী শ্রমিক বলে থাকি।

এরা সংখ্যায় প্রায় ৬ কোটির মতো।

এই লক-ডাউন এর ফলে যারা বেশি সংকটে পরেছেন। তাঁরা হল পরিযায়ী শ্রমিক। খাবার আছে তো থাকার জায়গা নেই। থাকার জায়গা আছে তো খাবার নেই। প্রতিনিয়ত আছে ঘর না ফেরার যন্ত্রনা।

তার উদাহরণ আমরা বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল, সংবাদ পত্র ও সোস্যাল মিডিয়া’তে দেখতে পাচ্ছি।

আমরা কেউ কেউ সংগঠনের কাজ করতে গিয়ে তাদের যন্ত্রনার কথা শুনতে পেলাম। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক।

ভাবা যায়। একজন মহিলা শ্রমিক তার ছেলে কে কোলে নিয়ে মেরঠ থেকে এলাহাবাদ উদ্দেশ্য পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। রাস্তায় কোনো খাবার নেই জল নেই আছে শুধু যন্ত্রনা। এর চাইতে আর কি লোমহর্ষক কাহিনী এই ভারতবর্ষে হতে পারে?

বান্দ্রা স্টেশন বা দিল্লির ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রের ব্যর্থতা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

এবার কিছু বলতে চাই মার্কসবাদ নিয়ে। যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী) সহ অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলো এই কঠিন মূহুর্তে ঐ পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের মুখে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এটাই মার্কসবাদ।

তাঁদের ঘরে ফেরার দাবিকে নিজেদের দাবি বলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। এটাই মার্কসবাদ।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে অভুক্ত মানুষগুলো কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটাই মার্কসবাদ।

এই মুহূর্তে কষ্টসাধ্য কাজ। তবুও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাহায্যার্থে কমিউনিটি কিচেন-এর মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটাই মার্কসবাদ।

সমগ্ৰ পৃথিবীতে যে সমস্ত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের পাশে মানবতাবাদ এর নজির সৃষ্টি করেছেন। এটাই মার্কসবাদ।

ভারতবর্ষের একটি মাত্র অঙ্গরাজ্য কেরালা। কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্য। যে ভাবে এই কঠিন মূহুর্তে কভিড’১৯ এর সঙ্গে যুদ্ধ করে রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ স্হাপন করেছেন। এটাই মার্কসবাদ।

প্রচারের আলোয় না এসে বহু সেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সহৃদয় ব্যক্তি গরীবদের দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। এটাই মার্কসবাদ।

পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কথা ও বেশি করে আক্রান্ত মানুষের করোনা টেস্টের কথা যারা বলে চলেছি। এটাই মার্কসবাদ।

দেশের সমস্ত মানুষ কে অর্থসাহায্য সহ রেশনের মাধ্যমে ফ্রী’তে খাদ্য দেওয়ার যারা দাবি তুলছেন। এটাই মার্কসবাদ।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও স্বচ্ছতার দাবিতে যারা রাষ্ট্রের হাতে যারা গ্ৰেফতার বরণ করেছেন। এটাই মার্কসবাদ।

সর্বশেষে একটাই কথা বলতে চাই। এখনও যারা প্রতিনিয়ত নতুন বিকল্পের কথা বলছেন। সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলছেন। এটাই মার্কসবাদ।

মার্কসবাদ কোনো আপ্তবাক্য নয়। ইহা একটি বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ। যা শুধু বই পড়ে হবে না।

“দুনিয়ার মজদুর এক হও”।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।