কলমের খোঁচা

বিজেপির নেতাজি প্রেম! সোনার পাথরবাটি


দেবু রায়,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:২২ শে জানুয়ারি:– আজকে যারা, নেতাজিকে নিয়ে নাচানাচি  করছে ভোটের স্বার্থে. একদিন এরাই নেতাজিকে ছুরি মেরেছিলেন  পিছন থেকে!
তাহলে  ইতিহাসকে একটু পিছনের  দিক থেকে  দেখি , সেই সময়  দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলছে সবচেয়ে  করুন অবস্থা ছিলো ব্রিটিশদের! এই সময়  ব্রিটিশ প্রভুদের সাহায্য করার  সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী, হিন্ধু মহাসভার  সভাপতি  সাভারকার। সেই সময়  হিন্দু মহাসভার থেকে  কিছু  বক্তৃতা  দেওয়া হয় , আর সেটাই প্রমান করে  তারা কতটা লালায়িত  ছিলো ব্রিটিশদের সাহায্য করার  জন্য। সাভারকারের বক্তৃতার  কিছু টা লিখছি !-
“ভারতের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য হলো  খুবই পরিষ্কার,  ভারত  সরকার  যতদিন হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষা করে  চলবে ততদিন  ভারত  সরকারের (পড়ুন  ব্রিটিশ ) সাথে আমরা সহযোগিতা  করবো ! এমনকি  ব্রিটিশদের সাথে পারস্পরিক  সহযোগিতার  ভিত্তিতে নির্দিধায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে  হবে ! এই সময়  যত  বেশী সম্বভ  হিন্দুদের যোগ দিতে হবে  ব্রিটিশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, এবং  বিমান বাহিনী তে, শুধু  তাই নয়, এর সাথে  আমাদের (হিন্দু ) অস্ত্র কারখানা , গোলাবারুদ কারখানা, যানবাহন  তৈরির  কারখানায় . আর এটাও আমাদের মনে  রাখা  দরকার যে এই সময় যুদ্ধে জাপান যোগ দেবার ফলে ব্রিটিশ শত্রুদের আক্রমণের  প্রত্যক্ষ (সরাসরি ) যুক্ত হতে  হবে। আমরা চাই  বা না চাই ভারতকে রক্ষা করার  জন্য সরকারের  সাথে  হাতে হাত মিলিয়ে, আমাদের লড়াই  করতে  হবে  কারণ  ব্রিটিশ আমাদের মিত্র, তাঁদের পাশে আমাদের সমস্ত  শক্তি দিয়ে সরকারের  পাশে দাঁড়াতে হবে , বিশেষ  করে  বাংলা  এবং  আসাম  প্রদেশের  হিন্দুদের এক মিনিট সময় নষ্ট না করে ব্রিটিশ সামরিক  বাহিনীতে যোগদান করুন .
সুতরাং  সাভারকারের এই ভাষণ  শুনলেই বুঝতেই  পারছেন সেই সময়  তারা কি ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে কি ভাবে পিছন  থেকে  ছুরি  মেরেছিলো ! তাই আজও  নাগপুর ক্ষুদিরামকে আতঙ্কবাদী বলতে  পারে!
ইতিমধ্যে১৯৪৪ শতাব্দীতে চৌঠা  জানুয়ারি নেতাজি রেঙ্গুনে তার আজাদ হিন্দ, ও নাগাল্যান্ড এর রাজধানী  কহিমা  দখল করে  নেয় ।

বাহিনী নিয়ে পৌঁছান , সেখানেই  তার প্রধান  কার্যালয়  স্থাপন  করেন , আর এর পরেই  নেতাজি তার বাহিনীকে নিয়ে ভারত  অভিযান এর ডাক দেন, “দিল্লী চলো , দিল্লীর পথই  আমাদের পথ , কদম  কদম  বাড়ায়ে যা “!
এর পরেই  ওই বছর (1944) মার্চ মাসে ভারতের  সীমান্তে মাউদুপ ব্রিটিশদের হাত থেকে  ছিনিয়ে  নেয়! ক্রমে নেতাজির বাহিনী মনিপুরের  রাজধানী  ইম্পল. এপ্রিল১৯৪৪ এর ৬ মার্চ আই এন এ ফৌজ  ভারতের  সীমানা থেকে  প্রায় ১৫০ মাইল ভিতর পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন  মুক্ত করে ! সেই সময় নেতাজির দেশ  বাসির উদ্দেশ্যে আবেদন  করেন “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো”
কিন্তু নেতাজির ভারতে  প্রবেশের  খবর  পেয়ে সাভারকার দেশবাসির উদ্দেশ্যে বলেন,  – “হিন্দুরা তোমরা  নেতাজির কথায়  কান দিও না, ব্রিটিশ আমাদের স্বাভাবিক মিত্র, ওদের বিরুদ্ধে যেও না, আমাদের আসল  শত্রু হলো  কমিউনিস্ট, মুসলমান , আর ইহুদি। হিন্দুদের উচিত  ব্রিটিশদের সাথে  কাঁধ মিলিয়ে লড়াই  করে  আইএন‌এ (ina) ফৌজকে তাড়াতে হবে।”
তাহলেই  বুঝুন  এরা কতখানি  শয়তান !. আর সবচেয়ে  মজার  হলো যারা মুসলমানদের শত্রু বলে তাদেরই নেতা শ্যামপ্রসাদ মুখার্জী  ছিলেন  তৎকালীন  ফজলুল  হক  (বেঙ্গল provinence ) মন্ত্রী সভায়  উপ মুখ্যমন্ত্রী, এটাকে কি বলা  যায় ভণ্ডামি ছাড়া?.

এই চমকপ্রদ  তথ্যগুলো কিন্তু সবই আজও  হিন্দুত্ব বাদীদের সংগ্রহ  শালায় আছে।
তবুও  এরা আজও প্রতিনিয়ত ইতিহাসকে বিকৃত করে  চলেছে , তারা চায়  ইতিহাস এর চাকা  উল্টো দিকে ঘোরাতে , তাই আন্দামানের সেলুলার জেলে বিপ্লবীদের নাম মুছে দিতে লজ্জা পায় না, আপনি আজকে যদি  কোনো ভক্তকে প্রশ্ন করেন, বেশী না, পাঁচ জন  বিজেপি পন্থী  স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম বলুন, ওরা পারবে না। কারণ  কোনো উত্তরই নেই ওদের কাছে.
তবে একটা কথা ঠিক  কি ভাবে আবেগ দিয়ে ভাষণ  দিয়ে মানুষকে ঘুরিয়ে  দেয়া যায় এটা বিজেপির নেতাদের থেকে  আর কেউ ভালো জানে না। এটা নিঃসন্দেহে বলা  যায়! তাই বাংলায়  ভোট আসলে রবীন্দ্রনাথ এর বেশ নিতে হয় , কথায় -কথায় নেতাজি, বিবেকানন্দ. পাঞ্জাবে গেলে ভগৎ  সিং  ইত্যাদি, কারণ  এনারা আমাদের আবেগ, গর্বের সাথে  মিশে আছে ! সুতরাং আবেগে সুড়সুড়ি দাও। রাষ্ট্র ক্ষমতা  দখল  করো , তার পরে  চাষীদের মারো, এন আর সি (nrc) করে  কাউকে ডিটেনশন  ক্যাম্পে পাঠাও, দেশকে বিক্রী করো. হ্যাঁ এটাই বিজেপি!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।