জেলা

মার্কসবাদ অতীত নয়, বর্তমান, ও ভবিষ্যৎ


রাহুল চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ: ৬ই মে:- সাধারণ ছাত্র-যুব কর্মী, যারা প্রসঙ্গত কার্ল মার্কস-লেনিন পড়ে গণসংগঠন বা খেটে খাওয়া মানুষের আন্দোলনে যুক্ত হননি তাঁদের জন্য মার্কসবাদের স্বরূপ ও প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে জানাতে এস‌এফ‌আই বীরভূম জেলা কমিটির পত্রিকা সম্পাদক সৌভিক দাস বক্সী কলম ধরেন। তাঁর লেখা ও বক্তব্য অনুযায়ী- সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলো, ভেঙে গেল বার্লিনের প্রাচীর। সেই ভাঙা প্রাচীরের টুকরো টুকরো ইট গুলো সো-কেস এ সাজানো থাকলো সমাজতন্ত্রের শেষ চিহ্ন হিসেবে। লেখক বললে লেখক, দালাল বললে দালাল ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা সেই ভাঙা প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষে পা রেখে ঘোষণা করে দিলেন ‘The End of History’ । খেটে খাওয়া মানুষের নিজে হাতে তৈরী করা পৃথিবীর ‘স্বর্গের’ পতন ঘটলো। সমাজতন্ত্রের ভাবনা’র ওপর নামল আক্রমণ। ফুকুয়ামা বই লিখলেন ‘The End of the History and the Last Man’ ।আক্রমণের লক্ষ্য আজ থেকে ২০২ বছর আগে জন্মানো এক বৃদ্ধ, যিনি সেই মুহূর্তে শায়িত ইংল্যান্ডের সমাধি ক্ষেত্রে।
আরও কয়েক বছর পর সাম্রাজ্যবাদের আঁতুরঘর আমেরিকার এক সেমিনারে আরো প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়ারের হাতে একটি বই তুলে দিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। আমরা যারা সাহিত্যের পড়াশোনার সাথে একটু যুক্ত , তারা এই ভদ্রলোকের নামের সাথে পরিচিত। পোস্টমর্ডানিজমের জনক, Jacques Derrida। তিনি যে বইটা লিখলেন তার নাম ‘ The Spectre of Marx’ মার্কসের ভূত। মার্ক্সের Totality, Unity, Universalism এর বিরোধিতা করে লিখলেন Discontinuity, Rapture এর কথা। মার্ক্সকে মুছে ফেলতে চাইলেন দেরিদা, কিন্তু যিনি শাশ্বত, যিনি চিরন্তন তিনি সর্বদা বর্তমান, ভূত নয়। তিনিই ভবিষ্যৎ। কিন্তু ইতিহাস দেরিদা, ফুকুয়ামাদের স্বীকৃতি দিল না।

পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক সিস্টেম মানুষকে দেওয়ালে ঠেলে দিচ্ছে ক্রমশ। তাই মানুষ আবারও সেই মার্ক্সেই ফিরে যেতে লাগল। মার্ক্সের লেখা ‘দাস ক্যাপিটাল’ সর্বোচ্চ বিক্রি হতে লাগল, বাইবেলের পরেই। ফুকুয়ামা থেকে দেরিদা থেকে মার্ক্সের হেটার সবাই প্রাণপণে ‘দাস ক্যাপিটাল’ – এর পাতা ওল্টাতে থাকলো অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচার ফর্মুলা খুঁজতে।Sometime history needs a push… দ্যা লাস্ট ম্যানের ইতিহাসের এন্ডিং হলো না। ইতিহাস বলল to be continued…মানুষের আন্দোলন চলছে। এক বয়স্ক ব্যক্তি বুকে একটা পোস্টার নিয়ে হাঁটছেন মিছিলে। সাংবাদিক রা তাকে প্রশ্ন করলেন ‘আপনি কি মার্ক্সবাদী? বা সোশ্যাল ডেমোক্রাট?’

সেই ভদ্রলোক বলেছিলেন, এসবের প্রশ্নেই ওঠে না। আজীবন ঘৃণা করেছি এদের। কিন্তু আজ জীবনের শেষে এসে বুঝেছি, এদের পথ টাই বাঁচার পথ, বাঁচানোর পথ।সেই বয়স্ক ব্যক্তিটির হাতে যে পোস্টার ছিল, তাতে আঁকা ছিল কার্ল মার্ক্সের ছবি, আর লেখা ছিল ‘ Back to Marx’, ফিরে চলো মার্ক্সে।আজ যখন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে মহামারী তে, কৃষক মরছে, শ্রমিক মরছে বারবার প্রমাণিত হচ্ছে ‘Why Marx was Right ‘মরে ভূত হয়ে যাওয়া লোকটার ২০৩ তম জন্মদিন আজ। আরও বেশী করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন মার্ক্স, দেশ কাল সময়ের সীমানা অতিক্রম করে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।