কলমের খোঁচা

মইদুলের রক্ত হবেনাকো ব্যর্থ


দীপঙ্কর সিংহয়ের প্রতিবেদন–চিন্তন নিউজ: ১৫ ই ফেব্রুয়ারি:- নবান্ন অভিযান ছিল কাজের দাবীতে, শিক্ষার দাবীতে। সেদিন মিছিল শুরু হতেই পুলিশ ভ্যান থেকে মাইকে ভেসে আসছিল বাংলার ‘গেস্টাপো বাহিনী’-র বাণী, “শান্তি বজায় রাখুন।” মিডিয়া বলছিল ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। অথচ কোনো অশান্তি তো আন্দোলনকারীরা করেনি। ঢিল তো ছোঁড়েনি তখন। তবে কেন এই ঘোষণা? তখনই মনে হয়েছিল, এ হচ্ছে শাান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হিংস্র আক্রমণ করার সলতে পাকানো। দিল্লিতে আশি দিনের বেশী কৃষক ধর্না চলছে। মহারাষ্ট্রে কৃষকরা বিরাট মিছিল করে দাবী পেশ করেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্র আন্দোলনকারীদের হত্যা করার সাহস করেনি। কিন্তু সেদিন নিজেদের হিংস্রতা প্রমাণ করতে কলকাতায় পুলিশ নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো পরিকল্পনা করে খুন করতে। কেউ কেউ বলছেন ফ্যাসিবাদকে রুখতে বাংলার অনুপ্রেরণাদাত্রীর হাত ধরার প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তব এটাই যে, ‘ছাপ্পান্ন-নবান্ন’ ফ্যাসিবাদের দুই বিষাক্ত ফুল, তা বারেবারে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্টদের ‘ছোট-বড়’ বিভক্তি হয়না। বাংলার গেস্টাপো বাহিনী সারা দেশের ফ্যাসিস্ট শক্তির মধ্যে জিঘাংসায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার সুযোগ খুঁজছিল।

এই গেস্টাপো বাহিনীর অনুপ্রেরণাদাত্রী বাংলার শাসন ব্যবস্থা দখল করেছিল নির্মীয়মান শিল্পের মাথায় পা রেখে। কারণ, তারা বুঝে গিয়েছিল ১৯৭৭ সাল থেকে ধাপে ধাপে বাংলার আইনশৃঙ্খলা ফেরানো, নৈরাজ্য দূর করা, বিনা বিচারে আটকদের মুক্তি দেওয়া থেকে শুরু করে বিদ্যুত্ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ক্ষুদ্র শিল্পের বৃদ্ধি, অন্ধকার লোডশেডিংয়ের দিন থেকে বাংলাকে আলোয় ফিরিয়ে আনা ও দরিদ্র কৃষিজীবীদের অধিকার সুরক্ষিত করার কাজে সফল হয়ে এবার যদি বৃহত্ শিল্প স্থাপন করে বেকারত্ব দূর করার কাজে এগিয়ে যেতে পারে, তবে সেই বাংলাকে আর পিছনে টানা যাবেনা। এই অগ্রগতি রোধ করার বহু প্রচেষ্টা বারবারই মানুষ বিফল করে দিয়েছিল। তাই শুরু হয়েছিল দেশী ও বিদেশী সবরকমের মানবতাবিরোধী শক্তির সাথে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে চূড়ান্ত আক্রমণ। অর্থের যোগান দিয়েছে বৃহৎ শিল্পপতি থেকে বিদেশী সংস্থা। তার সাথে যুক্ত হয়েছিল সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ করার ভুঁইফোর চিটফান্ড সংস্থাগুলো। না, এই আক্রমণ রোখা যায়নি। নিজস্ব কিছু ত্রুটি ও সাংগঠনিক দুর্বলতার মধ্যে এই বিপুল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সফল হয়নি। বাংলার শিল্প সম্ভাবনা ধ্বংস হয়েছিল। বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

আজ আর বছরে বছরে টেট পরীক্ষা হয়না, হলেও কে নিয়োগ কোন ফাঁক দিয়ে পাবে কেউ জানেনা। শুধু জানে মানুষের করের টাকাকে সৃষ্টিশীল পৌনঃপনিক উতপাদনের কাজে না লাগিয়ে পেটোয়া বাহিনীকে ও কখনো মানুষের ক্ষোভ সামলাতে মানুষের মধ্যে, ক্লাবের মধ্যে ছিটিয়ে ডোল বন্টন করে আড়ালে বিপুল লুঠের ভান্ডার তৈরি করতে। এই লুঠের টাকায় অন্য মানবতাবিরোধী শক্তিগুলোর সাথে দরকষাকষিতে কাজে লাগাতে। কিছু লোভী মানুষকে টাকা দেখিয়ে, পুরস্কার দিয়ে বশংবদে পরিণত করতে।

কিন্তু এত করেও হচ্ছেনা। আবার নবউত্থান ঘটছে মানুষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির। সংগঠিত হচ্ছে প্রতিবাদের ধ্বনি। তাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে গেস্টাপো বাহিনী। তার সাথে বার্তা দিতে চাইছে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে, “দেখ প্রতিবাদী নিধনে আমরা কত নিষ্ঠুর হতে পারি। আমাদের সরিয়ে তোমরা ক্ষমতা নিওনা। আমরাই পারি বাংলার মাটি নিজেদের দাবী আদায়ে সোচ্চার যুবক যুবতীর রক্তে বাংলার মাটি লাল করে দিতে। আমরাই শ্রেষ্ঠ ফ্যাসিস্ট।”
কিন্তু ওরা জানেনা, ওদের নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের যে লড়াই বেধেছে, তা আর বন্ধ করা যাবেনা। শ্রমজীবী মানুষের রক্ত খেতে খেতে এখন নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরাই লড়বে। অপরদিকে মানুষের আন্দোলনে উত্তাল হচ্ছে দেশ। শহীদ মইদুল ইসলাম মিদ্যার মতো যুবক যুবতীরা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করছে, “আর দেরী নেই আমি আসছি আলো জ্বালবো জ্বালবো বলে সূর্যের থেকে অগ্নিবন্যা নিয়ে আসছি।” এই খুনে ফ্যাসিস্টরা উল্লসিত হবে। আসুন হাতে হাত ধরি এই অন্ধকার পার হতে। প্রস্তুত থাকুক ফ্যাসিস্টরা। জেনে রাখুক, এমনিই চিরদিনতো কভু যায়না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।