দেশ

মোদি সরকারের সাসটেইনাবল ডেভেলপমেন্টের কবলে লিটল আন্দামান।


প্রতিবেদনে কল্পনা গুপ্ত:চিন্তন নিউজ: ৫ ই ফেব্রুয়ারি: –  আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত লিটল আন্দামান।  পোর্টব্লেয়ার থেকে ৮৮ কিমি দক্ষিণে। ৭০৭ বর্গ কিমি জায়গা জুড়ে অবস্থান, দৈর্ঘে ২৪ কিমি, প্রস্থে ৪৩ কিমি, ১৩২ কিমি সৈকত, সর্বোচ্চ স্থান ১৮৩ মিটার। জনঘনত্ব ২০২১ সাল অনুযায়ী প্রতি ব. কিমিতে ২৭ জন। শিক্ষার হার ৮৪ শতাংশ ,  সরকারি ভাষা হিন্দি, ইংরেজি।  লিটল আন্দামানে প্রধানত  ওঙ্গি উপজাতির বাস। এই দ্বীপটিকে ওরা ইগু বেলাং নামে ডাকে। এখানে ১৮ টা গ্রাম আছে সেখানে ওঙ্গিরাই বেশি থাকে আর কিছু পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া মানুষের বাস। এখানকার পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন সামুদ্রিক খাঁড়িতে নৌকা বিহার, হাতির পিঠে চেপে প্ল্যানটেশন দেখা, রঙ্গিন প্রবাল দেখা। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে ঘন ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য। রয়েছে বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ। ২০০৪ সালের ঘটে যাওয়া সুনামি ধ্বংস করে গেছে এখান সবরকম পরিকাঠামো।

ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এখানে বানাতে চাইছে গ্রিন ফিল্ড কোস্টাল সিটি, ফ্রি ট্রেড জোন যা সিঙ্গাপুর,  হংকংয়ের সাথে প্রতিযোগিতায় সামিল হতে পারবে। নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক  ” সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অব লিটল আন্দামান ভিসন ডকুমেন্টস ” নামক রিপোর্টে এমনই প্রকাশিত হয়েছে। এটি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে ” মেরিটাইম এন্ড স্টার্টাপ হাব” তৈরি করার প্রথম ধাপ।

কিন্তু লিটল আন্দামান ৯৫% ঢেকে আছে প্রাচীন ক্রান্তীয় অরণ্যের মহাদ্রুমে। যার ৬৪৯ বর্গ কিমি রিসার্ভ ফরেস্ট,  ৪৫০ ব. কিমি ওঙ্গি ট্রাইবাল রিসার্ভ। বিপুল জৈব প্রাকৃতিক সম্পদে পূর্ণ এক সতন্ত্র মর্যাদা স্বীকৃত আছে দেশের সংবিধানে, সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থায়। কিন্তু নীতি আয়োগের সুওয়ারিশ ক্রমে এই বনভূমি ও সংরক্ষিত উপজাতি অঞ্চলের ৩০% এর উপরে সংরক্ষণ মুক্ত করে অনিচ্ছুক ওঙ্গিদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করতে হবে।  এভাবেই সরকার তাদের কাঙ্খিত কাজ করতে চায়।

মনে রাখতে হবে,  লিটল আন্দামান কিন্তু ভৌগোলিক ভাবে অত্যন্ত অস্থির ও সংবেদনশীল একটি স্থান। এছাড়াও  এখানকার নির্জন সমুদ্র সৈকত ‘ জায়েন্ট লেদার ব্যাক ‘কচ্ছপের ডিমপাড়ার জায়গা। লিটল আন্দামান ফরেস্ট অফিসার এখানকার প্রাকৃতিক অস্থির অবস্থা, বাস্তুতন্ত্র, উপজাতি অধিকার ইত্যাদি কারণে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছেন। কর্পোরেটের হাতের পুতুল রূপী কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ পরাধীন ভারতের অনিশ্চিত জীবন চর্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। হিতাহিত বোধহীন কাজের ফলে ভারতের জল, জমি, অরণ্য, পাহাড়,  নদী, সমুদ্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের মুখে। ভয়ংকর মুনাফার লোভ আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলছে। এই অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতে ভারতের সাধারণ মানুষের  চেতনাকে জাগিয়ে তুলে সংগঠিত করার সময় উপস্থিত। তাই এই প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য সেই সচেতনতার প্রয়াসকে ছড়িয়ে দেওয়া।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।