বিদেশ

বামপন্থা দেশে দেশে(২)


রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২৮শে অক্টোবর:–দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট দেশ চিলি। বিশ্ব বিবেকের এক প্রতিনিধি পাবলো নেরুদা মানব ধর্মের পূজারী আলেন্দা,জনপ্রিয় কবি ও সুরের সাধক ভিক্টর জারা এই চিলির মাটিতে তাঁদের স্বাক্ষর রেখেছেন। কবি জারা সেনা জমানার অন্যতম শহীদ।এই সৌম্য সংস্কৃতির জন্মস্থান চিলি দীর্ঘকাল অত্যাচারী সেনানায়ক পিনোচেতার জমানায় নিষ্পেষণ সহ্য করে গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেলেও এক উদারনীতির প্রবক্তা মহাধনী ক্রোড়পতি সেবাস্তিয়ান পিনেরার কবলে পড়ে।

প্রবল অসন্তোষ জনমনে ধুমায়িত হচ্ছিল। একটি পরিচ্ছন্ন নিহিত স্বার্থ বর্জিত সংবিধানের উদগ্র দাবি জেগে উঠলো। তারই ফলশ্রুতিতে গত শুক্রবার চিলির শহরে- গ্রামে কুড়ি লক্ষেরও বেশির জনসমাবেশ আওয়াজ তুলেছে ‘চিলি জাগ্রত’ , বলেছে ‘ আমরা যুদ্ধ চাইনা’কবি ও গায়ক শহীদ জারার গান গেয়ে জানান দিয়েছে তাঁদের প্রাণের দাবি ‘ শান্তিতে বাঁচার অধিকার ‘ চাই। চাই পূজিবাদের দালাল স্বয়ং পূজির মালিক শ্রেণীর প্রতিভূ সেবেস্তিয়ান পিনেরার পদত্যাগ। চাই , স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা- পরিকাঠামোর কল্যাণ
জনক পরিবর্তন। চাই, প্রগতিশীল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা।

প্রতিক্রিয়াশীল বর্তমান সরকার স্বভাবতই তার দাঁত ও
নখ মেলেছে। মাত্র ষাটলক্ষ মানুষের শহর সান্তিয়াগোতেই বারো লক্ষ লোকের সমাবেশ ও মিছিলঠেকাতে নিয়োগ করে কুড়িহাজারের সশস্ত্র বাহিনী।কিন্তু ওরা পারেনি আটকাতে।মানুষ ঘরে লুকিয়ে পড়েন নি।তাঁরা রাস্তায় নেমে এসেছেন দৃপ্ত বেগে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে। পর্তুগালের সমান মাথাপিছু আয় নিয়েও কেন চিলির মানুষ অভূক্ত থাকবে ? কেন এত ধনবৈষম্য নিয়ে দরিদ্র জীবনযাপন?

বাস ও মেট্রোর ভাড়া তিরিশ পেসো বৃদ্ধির ফতোয়া সেই
আন্দোলনের বেগ আরও তীব্র করে তোলে। পিনেরোর
আসুরিক শক্তির চোখে চোখ রেখে সেই লড়াইয়ে এর
মধ্যেই শহীদ হয়েছেন ১৮ জন মারাত্মক জখম হন অসংখ্য
নারীও পুরুষ আন্দোলনকারী, গ্রেফতার এ পর্যন্ত ৭হাজারের
বেশী।প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন ওয়ার্কার্স ইউনাইটেড সেন্টার
ও শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় এই
বহুমুখী আন্দোলনের। ৪৮ ঘন্টার ধর্মঘট শুরু হয়েছে
শুক্রবার থেকেই।

সর্বশেষ খবরে প্রকাশ যে ২২ টি সংগঠনের আহ্বানে সর্বাত্মক সেই ধর্মঘট সম্পূর্ণ সফল।’এ্যাক্টিভ রিসার্চের’ অনলাইন সমীক্ষায় দেখা যায় যে এই আন্দোলন ন্যুন্যাধিক ৮০% মানুষের সমর্থনে পুষ্ট।

প্রগতিশীল মানবপ্রেমী দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বলেছেন গত চল্লিশ বছর ধরে যে উদারবাদী আগ্রাসন চলছে , তাতে এই পরিণতি প্রত্যাশিতই ছিল।

একসময়ের অগাস্তো পিনোচেতের সেনাপীড়নের
শিকার পরে চিলির রাষ্ট্রপতিমিশেল বাসেলেট বর্তমানে
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান। তিনি তাঁর প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন অতি শীঘ্র চিলির মানবাধিকার
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। চিলির সংসদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে
তদন্ত কমিশন গঠনের।

আন্দোলনকারী জনতার সংগঠন সমুহ তাদের দাবির সম্পূর্ণ রূপায়নের দাবিতে অনড়। তাঁদের সবল স্লোগান ‘ আর একটিও মৃত্যু নয়। এই দমনপীড়নের শেষ হোক।
সংবিধান নতুন করে বানান হোক। সেবেস্তিয়ান পিনেরার পদত্যাগ চাই।’

পিনেরা এখনও হিংসার অবসানের কথা ঘোষণা
করে নি। সিইউটি জানিয়েছে ‘ শেষ বাহাত্তর ঘন্টায় পিনেরা
অবশেষে ফ্যাসিবাদী পিনোচেতের জমানা ফিরিয়ে
আনলো।সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে আজ নির্নিমেষ চিলির দিকে।সেই চিলির বুকে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।