রাজ্য

বন্ধ চা বাগানে বন্ধ শ্রমিকদের ভাতাও ।


চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ১৮ সেপ্টেম্বর: বামফ্রন্টের শাসনকালে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা এবং আইনি সীমাবদ্ধতার মধ‍্যেও বামফ্রন্ট সরকার চা বাগানের শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। যদিও চা বাগানগুলির মালিক পক্ষ বরাবরই আইনকে ঢাল হিসেবে ব‍্যবহার করে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা সফলও হয়েছে। কিন্তু বাম সরকার শ্রমিকদের লড়াইয়ে বরাবরই সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছে।

চা বাগানের ছোট বড় সব কর্মচারী ও শ্রমিকরাই জানে ‘ফাউলাই’ এর কথা, এর পুরো কথাটি হোলো ফিনান্সিয়াল আ্যাসিস্টেন্স ওয়ার্কস অব লক আউট এ্যাবানডোনেড ইন্ডাস্ট্রি। যখন মালিকপক্ষের প্রতারনা বা বঞ্চনার শিকার হয়ে বন্ধ বা লক আউট হয় চা বাগানগুলোয় , তখন সরকার শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়, (এটাই নিয়ম) তখন প্রতি মাসে শ্রমিকরা সরকারি ভাতা পায়।এটাই তখন হয় শ্রমিক দের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।

বর্তমানে চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা রবীন রাই বলেন যে, বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন ২০০৪/২০০৫ সালে চালু হয়েছিল এই প্রকল্পটি, যা শ্রমিক স্বার্থে তৈরি হয়েছিল।প্রথমে ৫০০টাকা দিয়ে শুরু হলেও পরে যা বেড়ে হয় ১৫০০টাকা। এরপর থেকে গত আট বছরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ আর এক টাকাও বাড়েনি।যদিও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিনোদন মূলক কাজে সরকারি বরাদ্দ বেড়েছে বহুগুণ।

কিন্তু শ্রমিকদের অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৫ মাস আটকে আছে আলিপুরদুয়ারের ৩টি এবং জলপাইগুড়ির ৪টি বন্ধ বাগানের ৫ হাজার ৪৩৭ জন শ্রমিকের ফাউলাই এর টাকা, যা এই মূহুর্তে তাদের কাছে জীবনদায়ী। এই ভাতার দাবীতে ডেপুটেশনও জমা পড়েছে। কোচবিহার জেলা কমিটির সম্পাদক রবীন রাই আরো বলেন আমলাদের কথায় চলে শ্রমদপ্তর। তাদের গাফিলতিতেই বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিকরা। এই আইন প্রনয়নের সময় স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে কোনো চা বাগান ৬ মাসের বেশী বন্ধ থাকলে শ্রমিকরা এই ভাতা পাওয়ার অধিকারী হয়।

বান্দাপানি চা বাগানের মালিক ৬ বছর আগে বাগান বন্ধ করে চলে গেছে, কিন্তু ঐ বাগানের ২০০০ শ্রমিকের ভাতা বন্ধ গত এপ্রিল মাস থেকে। মরা চা বাগানে সামান্য যে কটা গাছ এখনো বেঁচে আছে তা থেকে এবং পাশের ধুমসি নদী থেকে বালি, পাথর তুলেই চলে তাদের জীবন ধারণ। অনেক শ্রমিক পরিযায়ী, কেউ গেছে কাজের খোঁজে কেরালায়। চা বাগানে উপেক্ষিত শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বেঁচে থাকার প্রাথমিক চাহিদা গুলো।

সাংসদরা ভোটের আগে পরিযায়ী পাখির মতো চা বাগান গুলো ঘুরে যায়। অনেক অনেক প্রতিশ্রুতি ভেসে যায় অভাবতাড়িত শ্রমিকদের কাছে স্বপ্নের রূপ ধারণ করে। তারপর সব এক, গাঢ় হয় অন্ধকার, অভুক্ত পড়ে থাকে চা বাগানের শ্রমিকরা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।