দেশ রাজ্য

দিল্লী যাওয়া “সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা”: মমতা


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৮ সেপ্টেম্বর: নয়া দিল্লীর বিমানে ওঠার ঠিক আগে এই কথাটাই বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। বললেন, “সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার” জন্যই এবার তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতে হচ্ছে। জানিয়েছেন, তিনি ৩৬৫ দিন কলকাতাতে থাকেন, কাজের জন্য কোথাও যাওয়া হয় না তেমন, তাই একটু দিল্লী যাচ্ছেন।

লোকসভা ভোটের আগে তথ্য অনুযায়ী যে প্রধানমন্ত্রীকে কোমড়ে দড়ি পরিয়ে ঘোরাবার কথা বলেছিলেন, ঠাস ঠাস করে চড় মারার কথা বলেছিলেন, কান ধরে উঠবস করানোর কথা বলেছিলেন, আজ তার কি এমন হল যে দৌড়ে দিল্লী যেতে হল? সুযোগ তো কম আসেনি দিল্লী যাবার? মোদীর শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন, যাননি। নীতিআয়োগের বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন, তিনি যাননি। তবে কি আজ নিজের বিপদ বুঝে মোদী দাদার দারস্থ হতে চললেন? এমন ভাবে বললেন যেন নিজের তেমন প্রয়োজন নেই, যেমন সবাই বেড়াতে যায় তেমন যাচ্ছেন, ওখানে পরিচিতদের মধ্যে মোদী পড়েন তাই একটু দেখা করে আসবেন।

প্রায় তিনদিন থাকবেন মমতা ব্যানার্জী দিল্লীতে। কিষেনজীর মৃত্যুর ঘটনা থেকে রাজ্যে কোনরকম অপ্রিয় ঘটনা ঘটলে দেখা গেছে মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের বাইরে। বলেছিলেন নীতি আয়োগের কোন অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই, এই বলে একটি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান রাজ্যের স্বার্থ সংবিধান প্রদত্ত অধিকারের কথা প্রধানমন্ত্রীর কানে তুলে ধরার সাংবিধানিক অধিকারটি বিসর্জন দিয়েছিলেন ইচ্ছেকরে। আর যে দুজন মুখ্যমন্ত্রী যাননি তাদের গুরুত্ব পুর্ন কাজ ছিল। বৈঠক বয়কট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

এখন প্রশ্ন হল যে মমতা ২০১৭ সালের ১০ই এপ্রিল শেষবার মোদী দাদার সাথে দেখা করেছিলেন তার এখন দেখা করার প্রয়োজনীয়তা কি? তাও আবার “একান্তে”। আসলে দুদিন আগে ম্যাথুকে জেরা করেছিল সিবিআই। এই ঘটনায় কিছু তাবড় তৃননেতা হাত পেতে, তোয়ালে মুড়ে, কাগজে গুটিয়ে টাকা নিয়েছিল। ম্যাথু এই স্ট্রিং অপারেশনটা করেছিলেন। আর তারপরই মমতার মোদীর শরন নিতে দিল্লী দৌড়ানো।

মমতা ব্যানার্জী কিছুতেই মোদীরর সাথে সামনাসামনি কথা বলেন না। কোন সভা, কোন অনুষ্ঠান কোন কিছুতেই না। যা বলেন সবটাই একান্তে, প্রতিবারই এক দাবী, রাজ্যের দাবী দাওয়া জানানো, আর রাজ্যের পাওনা আদায় করা। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছে “সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা”।

মোদী কোন আমন্ত্রণ জানননি তাকে। তিনি নিজেই ফোন করে দেখা করার আর্জি জানান। বৈঠকটিতে আদ্যন্ত বোঝাপড়া হতে চলেছে বলে সকলের ধারনা। কারণ বাস্তব পরিস্থিতি হল রাজ্য জুড়ে তৃনমূল অস্তিত্বের সঙ্কটে, মমতা ব্যানার্জীর ভাবমূর্তি একেবারে তলানি এসে ঠেকেছে, রাজীব কুমারের গ্রেপ্তারী কেউ আটকাতে পারবে না। আর এই পুলিশ কমিশনারের হাতেই রয়েছে তৃন সরকারের প্রান ভোমরা সারদা-নারদা-রোজভ্যালীর সব তথ্য মজুদ।

রাজীব গ্রেপ্তার হলে সে নিজেকে বাঁচাতে সব কথাই উগরে দিতে পারে। আর তৃনমূল দলটা তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তে পারে, আর এখানেই ভয় মমতা ব্যানার্জীর। এবার তিনি পুরোপুরি নিরুপায়। তার বাজপেয়ীকে মালপোয়া খাওয়ানোর মতো যশোদাবেনের জন্য দামী শাড়ী ইত্যাদি নিয়ে বাক্সপ্যাটরা গুছিয়ে দাদার দরবারে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।