চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ২৩ মার্চ: বিশ্বজুড়ে অতিমারীর চেহারা নিয়েছে কোভিড ১৯। ভারতে করোনা ভাইরাসে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪জনের। এই ভয়ংকর সংক্রমনকে রুখে দেওয়াই এখন সারা দেশের কাছে চ্যালেঞ্জ। বিশেষতঃ যেখানে ভারতের মতো জনবহুল দেশ, যার জনসংখ্যা ১৩০কোটি। সেখানে এই আক্রমণকে রোধ করতে চাই সঠিক পরিকল্পনা। ঠিক এখানেই অন্য সব রাজ্যের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে আছে কেরালা। এই রাজ্যের সরকারের তৈরী সঠিক ব্লুপ্রিন্টই সাফল্য এনে দিল বাম শাসিত এই রাজ্যটাকে। ঠিক এই জায়গাতেই কেরালা তফাৎ গড়ে দিয়েছে অন্য সবার সঙ্গে। এদের সাফল্যের খবর জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যমেও।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে কি আছে এই কেরালা মডেলে যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে? কেরলের এক আধিকারিকের কথায় মূল তিনটে হাতিয়ারই তাদের এনে দিয়েছে সাফল্য। প্রথমত সচেতনতা বৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত স্পষ্ট নির্দেশের সঙ্গে তথ্যের স্বচ্ছতা, এবং তৃতীয়ত দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ। করোনা প্রতিরোধে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে তা দ্রুত কার্যকর করা হয়েছে। কতোজন বহিরাগত এই সময়ের মধ্যে ঘরে ফিরেছে তার সঠিক হিসাব রেখে, তাদের পরীক্ষার পর তিনটে শ্রেণীবিভাগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল উইন্ডো পদ্ধতিতে করোনা সম্বন্ধীয় সমস্ত তথ্য বুলেটিনের আকারে রাজ্যের জনসমক্ষে নিয়ে আসা হয়েছে।
যাতে অহেতুক গুজব বা আতঙ্ক ছড়াতে না পারে সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির ৬৬টি প্রশিক্ষণ ভিডিও প্রকাশ, সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার, ১৪৩জন মনোবিদ নিয়োগ ও ৫০০০ জন টেলিকাউন্সেলর নিয়োগ। এছাড়াও সকলের জন্যে বিনামূল্যে রেশন, পূর্ত ও স্বাস্থ্য দফতরের দ্রুত সমন্বয় করে শুশ্রূষা কেন্দ্র গড়ে তোলা, আক্রন্তদের সরকারি নজরদারি-চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এছাড়াও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে কোনো জমায়েত না করা, স্কুল, কলেজ, সিনেমাহল, অফিস বন্ধ করে করোনাকে সাফল্যের সঙ্গে বাগে আনতে পেরেছে। এর জন্যে আগে থেকেই তৈরী করা হয়েছিল একটা আঁটোসাঁটো ব্লুপ্রিন্ট যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছিলেন, “কেরালা ‘জনতা কারফিউ’ পালন করবে নিজেদের বাড়ি এবং আশেপাশের অঞ্চল পরিষ্কারের মাধ্যমে। মাস্ক, গ্লাভস, অক্সিজেন সিলিন্ডার বা স্যানিটাইজার এর কোনো ঘাটতি এখানে নেই।” কেরালা মডেল এরাজ্যেও চালু করার দাবী জানিয়েছে এরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নগুলি। ওরা পারলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ঠিক কোন জায়গায় এসে আটকে যাচ্ছে? প্রশ্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলির।