ডাক্তার-রোগীর হেনস্থা, প্রায় সারা রাজ্যেই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার খবরে মাথাটা ভারী হয়ে আছে। হঠাৎ একটা ছবি একটু খোলা হাওয়া বইয়ে দিল। ঘটনাটা বললে সবারই মন খুশি হবে।
ইংল্যান্ডের ওভাল মাঠে খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে ভীড় উপচে পড়া। প্রচুর ভারতীয় দর্শক দল বেঁধে। বৃষ্টির জন্য টসে দেরী। সকলেই অধৈর্য্য।
নানা কথার মধ্যেই আওয়াজ এল, “হ্যালো সার! এদিকে চার ঠোঙা।” অবাক চোখে সবাই দেখলেন এক সাহেব (এদেশের সবাই সাহেব ) একমনে লাল পেঁয়াজ কুচি করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চার ঠোঙা ঝালমুড়ি তৈরী হয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দিয়ে মুড়িওয়ালা সাহেব পরের লাইনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
একজনকে উদ্দেশ্য করে হঠাৎ প্রশ্ন (ইংরাজিতেই) “তুমি মনে হয় বাঙালি, মানে, তুমি কি কোলকাতা থেকে?” সাহেব কিন্তু ‘ক্যালকাটা’ বলেন নি।
ততক্ষণে আগের ক্রেতাদের উচ্ছাস ভেসে আসছে : ‘আরে, জবাব নেহি’। ‘ভারতে
গেলে তো সবার ভাত মারা যাবে’ ইত্যাদি। কে একজন বলে উঠলেন ‘ওহ, উনি তো
ইতিমধ্যেই এখানে বিখ্যাত, ওঁকে আমরা ছাড়ছি না।’
এই সব কথার মধ্যেই ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন। “হ্যালো, আমি এঙ্গাস, এঙ্গাস ডেনুন। একজন প্রাক্তন শেফ। আমি কোলকাতায় গেছি। হ্যাঁ, কয়েকবার।” একজন ওর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে সকৌতুহলে জিজ্ঞেস করলেন, কী সূত্র ওঁকে কোলকাতা নিয়ে গেছে! উনি খুব খুশি হয়ে ওর কোলকাতার অভিজ্ঞতা শোনালেন তার পাশে বসে।
প্রায় পনেরো বছর আগে থেকে কয়েকবার মিঃ এঙ্গাস কোলকাতায় থেমেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউ.কে যাবার পথে।( উৎসাহী পাঠক ২০১৩ কোন এক দিনের ‘দি টেলিগ্রাফে’ পড়ে থাকবেন)
২০০৪ এ পাহাড়ে যাবার ইচ্ছে নিয়ে কোলকাতা আসা। বিবাদি বাগে টিকিট কাটতে গিয়ে ফুটপাত জমিয়ে রাখা খাবারের দোকানগুলো চোখ টানলো। চাপাটি-সবজি খাওয়া হল মৌজ করে। সেই থেকে কোলকাতার প্রেমে পড়া শহরের খোশ মেজাজের মৌতাতে।
পরের বছর আবার ফিরে এলেন। মির্জা গালিব আর রয়েড স্ট্রীটের কোনায় কিড স্ট্রীটের দিকে ডানলপের বাড়ির উল্টোদিকে বসে খাবার জায়গা আছে যে ঝালমুড়ির দোকানটা, তার মালিক ছেলেটির কাজ করার সময় তার হাতের ক্ষিপ্র ছন্দিল ভঙ্গিমা, তার বানানো খাবারের অবাক করা স্বর্গীয় আস্বাদ অভিজ্ঞ শেফ এঙ্গাসের মন কেড়ে নিল। ওর মনে হল, স্বর্গীয় কিছু যদি থাকে, তবে তা কোলকাতার ঝালমুড়ি। তিনি তাকে আপনার করে নিলেন।
কথা শেষ করে এগিয়ে গেলেন এঙ্গাস। অন্য খদ্দেরের কাছে। পুরোনো ম্যাগাজিনের পাতার ছেঁড়া দিয়ে ঠোঙা বানান, কুঁচি কুঁচি লাল পেঁয়াজ মিশিয়ে, একটুখানি ঝুড়ি ভাজা আর কিছুটা সস মিশিয়ে মুড়ি মেখে খদ্দেরের হাতে তুলে দিয়ে পয়সা নেওয়া, সব মিলিয়ে যেন এক টুকরো ইডেন ওভালে পৌঁছে গেছিল।