দেশ

জালিয়ান‌ওয়ালাবাগের স্বাধীনতা সংগ্রামের বেদনাদায়ক অধ্যায়কে মুছে ফেলা হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে


বিশেষ প্রতিবেদন, স্বাগতা রায়: চিন্তন নিউজ:১লা সেপ্টেম্বর:– ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যতম মোড় ঘোড়ানো ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড।সেখানে পাঞ্জাবের অমৃতসরে একটি বাগানে ১৫ থেকে ২০ হাজার ভারতীয় জমায়েত করেছিলেন যার বেশীরভাগ ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ।তাঁরা বৈশাখী উদযাপন করতে জমায়েত হয়েছিলেন। এক ই সঙ্গে তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল রাউলাট আইন নামক যে দমন মূলক আইন ভারতীয় দের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল,তার বিরোধীতা করা।এই রাউলাট আইনের মাধ্যেমে কোনরকম পরোয়ানা ছাড়াই যে কোন কাউকে বৃটিশ রা গ্রেফতার করে জেলে ভরে রাখতে পারতো। সত্যপাল এবং ডঃ সৈফুদ্দিন কিচলু গ্রেফতারের বিরুদ্ধে জালিয়ান ওয়ালা বাগে সেদিন ক্ষোভ জানানো ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। কিন্তু বৈশাখী উদযাপন করতে জমায়েত হ ওয়া মানুষেরা জানতেন না,সেদিন তাঁদের জন্য কি অপেক্ষা করে রয়েছে।ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির প্রায় পন্চাশ টি দল সেদিন কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ার এর নেতৃত্বে পুরো উদ্যান টি ঘিরে ফেলে। ডায়ারের নির্দেশে অবিশ্রান্ত গুলি চালানো হয় জমায়েত করা সাধারণ নাগরিক দের উপরে। প্রায় দশ মিনিট ধরে চলেএই নারকীয় হত্যাকান্ড।১৬৫০ টি বুলেট এই হত্যাকান্ডে ব্যাবহৃত হয়েছিল। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের রেকর্ড ঘাটলে জানা যায় চারশো মানুষ এই হত্যাকান্ডে প্রান হারিয়েছিলেন। সেনারা পুরুষ নারী এবং শিশু নির্বিশেষে একটি ঘেরাটপের মধ্যে সকলের উপর সেদিন গুলি চালিয়েছিল।তবে বৃটিশ দের হিসেবে চারশো জনের মৃত্যূ হয়েছে বলা হলেও ,ভারতীয় হিসেব বলে প্রায় একহাজার জনের বেশী মানুষ প্রান হারিয়েছিলেন সেদিন।

স্বাধীনতার পরে ঐ জায়গায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয় ওখানে নিহত মানুষদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঐ স্মৃতি সৌধ জীর্ণ হয়ে পড়ে। ঐ শহীদ স্তম্ভ পুণর্নিমানের ভার আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ও এন বি সিসির উপর দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারা এমন পুণর্নিমান করেছেন তা দেখে ইতিহাসবিদদের মাথায় হাত পড়েছে। নতূন রূপে যে স্তম্ভ জাতীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন নরেন্দ্র মোদী তা দেখে। ইতিহাসবিদরা একবাক্যে বলেছেন ইতিহাসকে পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে। আগে ঐ জায়গায় একটা কুয়ো ছিল। ডায়ারের সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা ঐ কুয়োর মধ্যেই প্রাণ হারিয়েছিলেন। ঐ ঐতিহাসিক কুয়োটি পুরো ডেকে দেওয়া হয়েছে।জালিয়ানওয়ালাবাগে ঢোকার রাস্তাটি নানান ভাস্কর্যে সাজানো হয়েছে। তৈরী হয়েছে লাইট এন্ড সাউন্ড এর ব্যবস্থা।

জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাক্তন অধ্যাপক চমন লাল বলেছেন মোদী সরকার ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। যে জায়গায় গেলে শহীদদের জন্য চোখে জল আসে সেই জায়গা একটি প্রমোদ উদ্যানে পরিণত করা হয়েছে। পুরো স্মৃতিস্তম্ভের কর্পোটারাইজেশন করা হয়েছে বলে ইতিহাস বিদদের অভিযোগ। এই গণহত্যা নিয়ে বই এর লেখক কিম এ ওয়াগনার বলেছেন ওই জায়গা থেকে ইতিহাসের শেষ চিহ্ন টুকুও মুছে ফেলা হয়েছে।এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।পুরোন স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় একটা ঝলমলে স্তম্ভ বানানো হয়েছে। বুলেটের ক্ষত চিহ্ন ওয়ালা দেওয়াল গুলো নানারকম ম্যুরাল তৈরী করা হয়েছে। সকলের মতে এইভাবে একটি স্বাধীনতা সংগ্রামের বেদনাদায়ক অধ্যায়কে পাল্টে ফেলা অতি অন্যায় কাজ হয়েছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।