দেশ রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি পুলিশি রাষ্ট্রে বাস করছে??সারাদেশে চলছে রাষ্ট্রীয় দমন!!!!


রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য:চিন্তন নিউজ:২২ শে আগস্ট :আবার পুলিশের তান্ডব বেরিয়ে এলো মুখোশের আড়াল ছেড়ে। আমরা  প্রত্যক্ষ করলাম : জনসেবা( Civil service ) তার নিজস্ববৈশিষ্ট্যে,সহনশীলতা,বুদ্ধিমত্তা,জনসহযোগিতা,প্রভৃতি লোককল্যাণকারী স্থিতি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে ক্রমশঃ বিবর্তিত হয়েছে এক পুলিশি রাষ্ট্রে।

কাশ্মীর থেকে কোহিমা,কাশ্মীর থেকে কর্ণাটক কোনো ব্যতিক্রম নজরে পরে না। এক মেধাহীন হৃদয়হীন যান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার জ্বলন্ত নিদর্শন। প্রশ্ন ওঠে : আমরা কি সত্যিই এক স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতা মানে কি শুধুই প্রশাসকের চামড়ার রংপাল্টানো ! নাগরিকদের জীবন ‘ সেই তিমিরেই ‘।

রাষ্ট্রের নির্মমতা  চরম সীমায় পৌঁছেছে। ডাক্তার, বিএস এন এলএর কর্মী, পার্শ্ব শিক্ষকদের পর এবার প্রশাসন লাঠি হস্তে
শাসন করলো বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের। নারকীয় দৃশ্য।কী ঘটেছিল?

বৃত্তি মূলক শিক্ষকদের গুরূত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত বিপুল জনসংখ্যা ও মাথাভারী অর্থনীতির দেশে সহজেই বোধগম্য।আমরা তাঁদের কী অবস্থায় রেখেছি ! যৎসামান্য  ভাতায় তাঁরা এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। গত সাত বছরে মাত্র দশটাকা বেড়েছে তাদের ভাতা। ভাতা বাড়ানোর দাবিতে তাঁরা মিছিল করে শিয়ালদহ থেকে কারিগরি ভবনে গিয়ে ভিতরে শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থানে বসেছিলেন। বুধবার, ২১.০৮.১৯ তারিখে।প্রথমে কোন বাধা ছিল না।পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘিরে ধরে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বেধড়ক পেটাতে থাকে কোন রকম সতর্কতা ছাড়াই। কালিশঙ্কর মাহাতো নামে এক শিক্ষকের মাথা ফেটে যায়, তিনি তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লাঠির ঘায়ে কারো পিঠে, কারো পায়ে কালশিটে পড়ে যায়।এক শিক্ষিকার হাতে গুরূতর আঘাত লাগা ছাড়াও  বহু শিক্ষক- শিক্ষিকা আহত হন।

লাঠি চালিয়ে অবস্থানকারীদের ভবনের  বাইরে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যস্ত এস এন ব্যানার্জী রোডের উপর সর্বসমক্ষে
পুলিশ ও অবস্থানকারীদের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
পুলিশ তখনো নিরস্ত হয় না।বেপরোয়া লাঠি চালিয়ে
অবস্থানকারীদের সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের দিকে তাড়া করে পুলিশ। অনেকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হন। কয়েকজন শিক্ষককে
গ্রেফতার করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে সংবাদে প্রকাশ।

রাজ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা অন্যুন দশ হাজার। ৬৫ %
আংশিক সময়ের, ৩৫% চুক্তিভিত্তিক। আংশিক সময়ের শিক্ষকদের ভাতা ১০টাকা বাড়ান হয়েছে আগে। তাঁরা ক্লাশপিছু ১১০টাকা হিসাবে মাসে ৬০০০ টাকার মত পান। চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকদের ভাতা মাসে
৯০০০ টাকা। আর, প্রশিক্ষকরা পান মাসে ৭০০০টাকা।এই ভাতা বাড়ানোর দাবিতেই তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন অবস্থানে বসেছিলেন।তাঁর বিরুদ্ধেই এই  সহিংস পুলিশি আক্রমণ ছাড়া আর
কোনো পথ খুঁজে পেল না ক্রোধান্ধ প্রশাসন। হায় রাজনীতি !

পুলিশি নৃশংসতার নিন্দা করেছে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি ওনিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। এবিটিএর সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন , পার্শ্ব শিক্ষকদের মত বৃত্তিমূলক শিক্ষকরা স্কুলগুলির কাছে সম্পদ। অনেক স্কুলেই তাঁরা স্থায়ী শিক্ষকদের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করেন। অথচ তাঁদের সাম্মানিক নামমাত্র। তাঁরা নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে গেলে তাঁদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাড়ানো হলো, এ কেমন প্রশাসন! এবিটিএর সাধারণ সম্পাদক সমর চক্রবর্তী ও সরকারের এই পুলিশ নির্ভর হিংস্র  প্রশাসনের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।