কৃষ্ণা সাবুই,বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ০৩/০৯/২০২২– প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার (এ বছর ৩ রা সেপ্টেম্বর, শনিবার) বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়। মুল উদ্দেশ্য হলো, বিলুপ্তির পথ থেকে শকুন কুলকে বাঁচানো, অর্থাৎ জীবকুলকে রক্ষা করা। শকুন এক প্রকার পাখী, যে পাখী জীবজগতের কল্যান সাধন করে,মৃত প্রানীর মাংস খেয়ে। সাধারনত এরা অসুস্থ মৃত প্রানীর আশেপাশে উড়ে বেড়ায়, প্রানীটির মৃত্যু হলে মাংস খায়।
পাখীগুলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী এবং শিকারী পাখী হিসাবে পরিচিত। এই পাখীর গলা ঘাড় ও মাথায় কোন পালক থাকেনা।প্রকান্ড ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে।
আমরা প্রায়শই একটা কথা বলি, শকুন যতো ওপরেই উঠুক, চোখ থাকে ভাগাড়ের দিকে। হ্যাঁ, কথাটা ঠিক, চোখের অসাধারন তীক্ষ্ণদৃষ্টিই তার কারন। এরা বাসা বাঁধে বিশাল গাছে যেমন বট,অশ্বত্থ, পাকুড় ইত্যাদি গাছে।এছাড়া গাছের কোটরে বা সুউচ্চ পর্বত শিখরে। স্ত্রী শকুনী একসাথে এক থেকে তিনটে ফ্যাকাসে রং এর ডিম পেড়ে থাকে ।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220903_115455-1024x661.jpg)
সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন আছে। এর মধ্যে পশ্চিম গোলার্ধে ৭ রকম প্রজাতি এবং পুর্ব গোলার্ধে ১১ রকম প্রজাতি দেখা যায় বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির শকুন আছে। কিছু নামকরণ ও আছে। যেমন বাংলা শকুন, রাজ শকুন,গ্রীফন শকুন, হিমালয়ী শকুন,সরুঠোঁট শকুন,কালা শকুন,ধলা শকুন ইত্যাদি। তবে গ্রীফন প্রজাতির শকুন খুব কম দেখা যায়। সমস্ত প্রজাতির শকুন ই কিন্তু আজ সারা বিশ্বে বিপন্ন।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220903_115722-1024x654.jpg)
আমরা শকুন নিয়ে এতো চিন্তাভাবনা কেনো করবো?অবশ্যই কারণ আছে। শকুন একমাত্র প্রানী যারা রোগাক্রান্ত মৃত প্রানী খেয়ে হজম করতে পারে,তার ফলে কঠিন এবং ছোঁয়াচে রোগ থেকে জীবকুলকে বাঁচায়। যেমন এ্যনথ্রাক্স, যক্ষা, ক্ষুরারোগের সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।
প্রসঙ্গত জানা দরকার এ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত মৃতদেহ মাটীতে পুঁতে ফেললেও তা ১০০ বছর পর্যন্ত সংক্রমন সক্ষম থাকে। শকুন আমাদের জীবকুলকে কিভাবে রক্ষা করছে তা গভীর ভাবে ভাবার দিন এসেছে। ইদানিং বিভিন্ন দেশে গবাদি পশু চিকিৎসায় ‘ডাইকোফ্লেনাক’ নামের ব্যথানাশক ওষুধের প্রভাবে শকুন মারা যাচ্ছে।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220903_115707-1024x547.jpg)
তাই ভারত,পাকিস্তান,ও নেপালে ‘ডাইকোফ্লেনাক’ নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ নিষিদ্ধ করেনি তাই শকুন বিলুপ্তির পথে।একই বিষক্রিয়া দেখা যাচ্ছে ক্রিটোপ্রোফেনের ক্ষেত্রেও।এই ওষুধে মৃত পশুর মাংস শকুন খেলে শকুনটি ২_৩ দিনের মধ্যে মারা যায় কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার ফলে।এই কারনে গত ৩ দশকে উপমহাদেশে ৭৫% শকুন মারা গেছে। ১৯৮০ দশকে সার্কভুক্ত দেশে শকুনের যে অস্তিত্ব ছিলো এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪০,০০০ হাজারে।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220903_115802-1024x573.jpg)
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অফ ভেটেনারী মেডিসিন এর গবেষক ডক্টর লিন্ডসে তাঁর গবেষনায় প্রমান করেন, পশু চিকিৎসায় ‘ডাইকোফ্লেনাক’ এর ব্যবহারই শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। ভারতে ৩০শতাংশ শকুন মারা যাওয়ার কারনও এটাই।
তাহলে মানব সৃষ্ট কারনেই এই মৃত্যু ঘটছে।
এখন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ‘ ডাইকোফ্লেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেনের’ পরিববর্তে ‘মেলোক্সিক্যাম’ নামক ওষুধ গবাদি পশুর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমাদের ও গভীরভাবে ভাবতে হবে যাতে শকুন পাখিটীকে নিরাপদে রাখা যায়। জীবকুলের এহেন ত্রাতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। যে ওষুধে এই উপকারী পাখীর মৃত্যু হচ্ছে তার জন্য প্রয়োজনে এই ওষুধ ব্যবহার বন্ধে কড়া আইন প্রনয়ন করতে হবে।এটাই হোক আজকের দিনের অঙ্গীকার।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2022/09/IMG_20220903_115120.jpg)