দেশ

১লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস।


সীমা বিশ্বাস: আসাম, চিন্তন নিউজ:২ রা জুন:– ১৯৫২ সনের এপ্রিলে বিশ্ব নারী সংঘ ভিয়েনা শহরে আন্তর্জাতিক শিশু রক্ষা সন্মেলন অনুষ্ঠিত করে। উল্লেখ্য পৃথিবীর ৫৮ টা দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে ভারত থেকেও ১৫জন প্রতিনিধি উক্ত সন্মেলনে অংশ গ্ৰহন করে।

১৯৫৯সনে রাষ্ট্রসংঘ শিশুর অধিকার সম্পর্কে দলিল প্রস্তত করে। তারপর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ উক্ত দলিল ১৯৮৯সনে সিদ্ধান্ত আকারে গ্ৰহন করে। ভারত সহ ১৯২ টা দেশ এই ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করে। ঘোষণা পত্রে শিশুর স্বাধীনতা এবং অধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসংঘ দশটা নীতি গ্ৰহন করে সদস্য রাষ্ট্র গুলো কে সেই নীতি সমূহ পালন করার নির্দেশ দেয়।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানব অধিকার কমিশন শিশুর অধিকারকে মানব অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারত সরকার রাষ্ট্রসংঘ ঘোষিত শিশুর অধিকার রক্ষার সনদের ভিত্তিতে ১৯৬০ সালে শিশু আইন প্রবর্তন করেছিল যদিও বাস্তবে সরকারের সদিচ্ছার অভাবে উক্ত আইনের ধারাগুলো সঠিকভাবে রূপায়িত হয়নি।১৯৮৬ সালে ভারত সরকার শিশু শ্রমিক নিবারণ এবং নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। উক্ত আইন মতে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হবে। বিপজ্জনক কাজে শিশুকে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে না। ১৪ বছরের নিচের শিশুদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করলে তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সেইসঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। শিশুর রক্ষার প্রশ্নে অনেক আইন তৈরি হলেও বাস্তবে আমাদের দেশে শিশুরা ভীষণ প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হয়ে থাকে।আজও আমাদের দেশের শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে , অকালে মৃত্যু মুখে পরে।যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যুদ্ধ-বিগ্রহ গোষ্ঠী সংঘর্ষ অথবা সন্ত্রাসের ঘটনায় শিশুরাই সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অতি নিষ্ঠুরভাবে শিশু এবং নারীদের হত্যা করা হয়েছিল। গৃহহীন ,পিতৃ-মাতৃহীন লাখ লাখ শিশু মহাযুদ্ধের শিকার হয়েছিল । প্রাপ্ত তথ্যমতে ৭৫ হাজার শিশু অনাথ ,তিন লাখ গৃহহীন , তিন হাজার শিশু বন্দি হওয়ার সঙ্গে মোট ৬০ লাখ শিশু নিহত হয়েছিল। এই শিশুদের দুর্দশার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে রাষ্ট্রসংঘ শিশুদের সাহায্যের জন্য একটা অর্থ ভান্ডার গড়ে তোলার আহ্বান জানায়। বিশ্ব নারীসঙ্ঘ এই অর্থ সংগ্রহের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে ইউনিসেফের তহবিল গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে দেশে দেশে অনাথ শিশু রক্ষার জন্য প্রচার আন্দোলন গড়ে তোলে। উল্লেখ্য ইউনিসেফ হচ্ছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীনে শিশুর আন্তর্জাতিক সংস্থা।

শিশুর সর্বাঙ্গীণ উন্নতি কামনা করে নারীসঙঘ পয়লা জুন তারিখটা আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করার দাবি জানায় এবং এই দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্র সংঘের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কল্যাণ সংস্থা বিশ্ব নারীসঙ্ঘ এবং ভারতসহ পৃথিবীর ৬৮ টি দেশের প্রতিনিধি ১৯৫০ সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হয়ে পহেলা জুন তারিখটা আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ।পৃথিবীর বহু দেশে উক্ত দিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালন করে যদিও ভারতে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর জন্মদিন অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস উদযাপন হয়ে আসছে।

সর্ববৃহৎ মহিলা সংগঠন নিখিল ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলা অঞ্চলে বিভিন্ন কার্যসূচি এর মাধ্যমে পয়লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালন করে।

এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শিশুদের সমস্যাগুলো নিয়ে সংগঠনের কর্মীরা আলোচনা করেন। সর্বশিক্ষা সংহত শিশু প্রকল্প এখনো সরকারের সঠিক নীতির অভাবে গরিষ্ঠ সংখ্যক শিশুকে এখনো স্পর্শ করতে পারেনি ।দুঃখের বিষয় রাজ্যে রাজ্যে শিশু সরবরাহের ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।সেই সঙ্গে শোষণ শিশু নির্যাতন যৌন উৎপীড়ন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায় দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার দেশ তথা রাজ্যের যে আর্থসামাজিক অবস্থা- সেখানে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও শিশুর ভবিষ্যৎ সর্বাঙ্গ সুন্দর করে গড়ে তোলা খুব কঠিন । সরকারের আর্থিক নীতি সমাজের মধ্যে ধনী-দরিদ্রের যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা বিত্তবান ঘরের গোলামী করা , হোটেল রেস্তোরাঁ অথবা কারখানায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করা ছাড়া তাদের কোন গত্যন্তর থাকে না। চরম দারিদ্রতায় জন্মদাত্রী পিতৃ-মাতৃ দ্বারা সন্তান বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অথবা সন্তানকে হত্যা করে নিজেরাও আত্মঘাতী হচ্ছেন । এই ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। তদুপরি দারিদ্রতা নিরক্ষরতা এবং শিশু শ্রমিককে নিয়ে গড়ে ওঠা অসাধু চক্রের হাতে বন্দী লাখ লাখ শিশুকে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে।এই দুর্বিসহ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর ভবিষ্যৎ সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে দারিদ্র্যমুক্ত প্রকল্প রূপায়ণে অগ্রাধিকার দিতে হবে । সকল শিশুকে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এই মৌলিক অধিকার গুলো গুরুত্বসহকারে রক্ষা করতে হবে। পদ পথশিশুকে সরকারি প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। আজকের শিশু রা আগামীদিনের নাগরিক। তাই সকল শিশুকে সর্বাঙ্গ সুন্দর ভাবে গড়তে পাড়লে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উদযাপন করা সফল হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।