চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ:২৮শে অক্টোবর:–জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের(জেএনইউ) স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ।।
যে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত চিন্তার প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়, সেই শিক্ষাঙ্গনে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বারে বারে স্বাধীকার এ হস্তক্ষেপ ঘটে চলেছে সরকারি মদতে। এর কারন হচ্ছে এখানকার সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপকদের বৃহৎ অংশ বামপন্থী মুক্তচিন্তার ধারক এবং এখানে বামপন্থীদের ছাত্রসংসদ ইউনিয়নে জয়লাভ করে, করেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থনীতি নিয়ে আলোচনায় দেশের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে এলেও সম্ভবত পেশাগত কারনে সৌজন্য বশত জেএনইউ এর সাম্প্রতিক দমবন্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সত্বেও কোনো আলোচনা হয়নি। বর্তমানে এই শিক্ষাঙ্গন যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারন রয়েছে।যদিও সকলে মনে করেছিলেন যে এই আলোচনায় জেএনইউ প্রসঙ্গ হয়তো তেমন গুরুত্ব পাবেনা।কিন্তু এর সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতি নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেছেন।যদিও আজকের আলোচ্য বিষয় অভিজিত বন্দোপাধ্যায় এর অর্থনীতি বিষয়ক নয়। এটি সম্পূর্ণভাবেই জেএনইউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আভ্যন্তরীণ এবং শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কিত।
সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি এখানকার শিক্ষাঙ্গনের কমনরুমে প্রবেশ এবং ঐতিহ্যশালী ‘পার্থসারথী রক’এ প্রবেশ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করেছে।এখানকার পড়ুয়া এবং অধ্যাপকবৃন্দ মনে করছেন, এই নির্দেশ সরাসরি তাঁদের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ, যা এখানে একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যা আরও তাৎপর্যপূর্ন তা হলো ঐতিহ্যসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনভিপ্রেত আক্রমনের বিষয়ে শিক্ষামহলের অদ্ভূত নীরবতা। শুধু তাই নয় শিক্ষামহলের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী,যারা আমলা ও পুলিশ অথবা প্রশাসনের উপরমহলে রয়েছেন তাদের নীরবতা ও অত্যন্ত বেদনাদায়ক। হতে পারে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু এই দায়বদ্ধতা কখনোই উপাচার্যের কাছে বিনম্র আবেদনে বাধা সৃষ্টি করেনা। তাঁরা অনায়াসেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য উপাচার্যকে স্মরন করাতে এবং তিনি যাতে সেই ঐতিহ্য সম্বন্ধে সচেতন থেকে পদক্ষেপ গ্রহন করেন তা বোঝাতে সচেষ্ট হতে পারতেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হলো খোলামেলা পরিবেশ যা মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক। যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যতে, ‘স্ট্যাটিউট’ ও ‘অর্ডিন্যান্স’ এর উপর নয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী সব উপাচার্যই এই ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে এসেছেন। এই ঐতিহ্যই জয়শঙ্কর ও সীতারামন এর পাশাপাশি অভিজিত ব্যানার্জীর মতো ছাত্রের জন্ম দিয়েছে। এই শিক্ষাঙ্গন থেকেই ছাত্ররা হাভার্ড এর মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি দিয়েছেন। অন্যদিকে সুনীল এর মতো মেধারা গ্রামে গিয়ে কাজ করার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই অধ্যাপকদের প্রতি যত্নশীল থেকেছে কিন্তু যখন রোমিলা থাপারের মতো অধ্যাপিকার মূল্যায়নে পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগী হতে দেখা যায়, তখনই মনে হয় বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা হাওয়া থমকে গেছে দমবন্ধ পরিবেশে।বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিস্থিতি রাজনীতির ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে, যা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষুদ্র স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই জেএনইউ এর মতো উচ্চতায় পৌছনোর স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য ও মন্ত্রী জেহাদ ঘোষণা করছেন তারা আর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জেএনইউ এর মতো হতে দেবেনা। সমাজ এবং রাষ্ট্র হিসেবে এটুকুই এগোনো গেছে। দেশের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শিক্ষিতদের দিগন্ত সঙ্কুচিত হয়েছে এবং হৃদয় সংকীর্ণ হয়েছে। ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ঐতিহ্যকে ভিতর থেকে বিনষ্ট এবং ধ্বংস করা হচ্ছে।