দেশ

দেশে লক ডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত


মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:৮ই এপ্রিল:-বর্তমান বিশ্বের আতঙ্ক করোনা ভাইরাস। এই আতঙ্ক ঘিরে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অভিধানে ঢুকে পরেছে কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সোস্যাল ডিস্টান্স , স্যানিটাইজেশন ইত্যাদি ভারি ভারি নতুন শব্দ। বিশেষ করে গৃহবন্দি কথাটার অর্থ এবং ব্যবহার এখন আপামর বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট। সকলেই মানেন যে করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ঘরবন্দি থেকে মানুষে মানুষে দৈহিক দূরত্ব একমাত্র উপায়। গত২৪শে মার্চ মাঝ রাত থেকে ১৪ ই এপ্রিল এই একুশ দিন সরকারি ভাবে গৃহবন্দি নির্দেশ জারি হওয়ার পর থেকেই হাসপাতাল , ব্যাঙ্ক, এরকম কয়েকটি জরুরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া স্কুল কলেজ অফিস কাছাড়ি থেকে দিনমজুরের কাজকর্ম সব বন্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন একটা দিন নাই যে নতুন সংক্রমণ বা মৃত্যু হয়নি। বরং প্রতি দিনই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কতিপয় অবিমিশ্রকারী মানুষের অসচেতনতা এবং হঠকারিতা এর জন্য বহুলাংশে দায়ী।

এমতাবস্থায় গৃহবন্দির পনেরো দিনের দিন, কেন্দ্র সরকার অনুভব করছে লকডাউন নির্দিষ্ট দিনে তুলে নেওয়া উচিত হবে কিনা? এই মর্মে কেন্দ্র সরকার সমস্ত রাজ্য সরকার এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর গুরুত্ব দিতে চান! কেন্দ্রের এক শীর্ষ সূত্র অনুযায়ী জানা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত রাজ্যকে জানিয়েছেন, রাজ্যগুলি যেন তাদের জেলা স্তরে করোনা পরিস্থিতি যাচাই করে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন লকডাউন ধাপে ধাপে তোলা হলেও লকডাউন পরবর্তী নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা হবে! দেশে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে কতিপয় ধর্মীয় স্থানে বিশাল জমায়েত এবং সেখানে উপস্থিত সকলের সঠিক খোঁজ না মেলায় তাদের দ্বারা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লক ডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেছেন এভাবে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বাড়তে থাকলে ১৪ এপ্রিলের পরও ক’টা দিন কষ্ট করতে হবে। তিনি বলেন “কয়েকদিন কষ্ট করলে যদি একটা সুন্দর ভবিষ্যত পাওয়া যায় তাহলে সেটা আমাদের করতেই হবে”। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকার বলেছেন সরকার প্রতিমুহূর্তে বিশ্ব ও দেশীয় পরিস্থিতি দিকে নজর রাখছে । সবদিক খতিয়ে দেখেই বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

উপরাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য লক ডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত বলে অনেকেই মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে অন্যান্য রাজ্য এখনও তাদের অভিমত না জানালেও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্র শেখর রাও বলেছেন যে , তার রাজ্যে সম্প্রতি সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে । কাজেই তার আবেদন ১৫ এপ্রিলের পর অন্তত দু সপ্তাহ লক ডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হোক। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা জানার জন্য দেশবাসী কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। লকডাউন বৃদ্ধি দেশবাসীর স্বার্থে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। এই মাসাধিক কাল লকডাউনে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, শিক্ষা , সংস্কৃতির ব্যাপক ক্ষতি হবে সন্দেহ নাই।

কিন্তু তারপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। দেশের বৃহৎ সংখ্যক প্রান্তিক মানুষের কি হবে? সরকার তাদের জন্য কি বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? রেশনে সামান্য চাল গম দিয়ে মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটে না। দুবেলা ভাত / রুটি ছাড়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক কিছু দরকার হয়! এছাড়া অতি নিম্নবিত্ত ছোট দোকানদার মুটে ইত্যাদিদের এতদিন রুজি রোজগার বন্ধ থাকলে তারাই বা কি করবে? লকডাউন ঘোষণা হওয়া পর থেকেই বহু স্চ্ছোসেবী সংস্থা এন জি ও বিশেষ করে ছাত্র যুব সমাজ নিজস্ব উদ্যোগে খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য যতটুকু সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । কিন্তু তা কোনো দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা হতে পারে না! করোনা অতিমারি রোধ করতে ঘরবন্দি নিঃসন্দেহে সঠিক পদক্ষেপ । কিন্তু লকডাউন মেয়াদ বৃদ্ধির আগে কেন্দ্র রাজ্য উভয় সরকার কে নিরন্ন কায়িক শ্রমজীবী মানুষের মুখে অন্ন ও নিত্য দ্রব্যের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার।

একদিকে যেমন সরকার লকডাউন বাড়িয়ে দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে খাদ্যের যোগান দেওয়ার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এবং অপর দিকে জনসাধারণকে যথেষ্ট সচেতনতা সাবধানতা অবলম্বন করে জাতি ধর্ম দলমত নির্বিশেষে সরকারের সহযোগিতা করতে পারলে নিশ্চয়ই করোনা মহামারী থেকে দেশ মুক্ত হবে এবং দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবে বলে আশাবাদী সব মহল।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।