রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ১৭জুলাই: সারা দেশে বিক্ষোভে পথে নেমেছেন ভারতীয় রেল কর্মীদের এক বৃহৎ অংশ। রেলের ৬৫টি ডিভিশনের প্রত্যেকটি অন্ততঃ ৪টি করে ক্রু-লবিতে লোকো রানিং ষ্টাফেরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে অনশনে সামিল হয়েছেন।সারা ভারত শ্রমিক নেতা বামপন্থী তপন সেন বলেছেন, “ভারতীয় রেল দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রেলের বেসরকারীকরণ মানুষের জীবনকে আরও সঙ্গীন করে তুলবে।”
বেসরকারীকরণ অভিমুখে ১১ দফা কর্মসূচি জানিয়ে রেল ঠিক করেছে এর প্রথম ধাপ হিসাবে যাত্রীভাড়ার উপর বর্তমান ভর্তূকি তুলে দেওয়া হবে ১০০ দিনের একটি কার্যক্রমের ভিত্তিতে। এর জন্য প্রথমে টিকিট কাটার সময় ভর্তূকিহীন ও ভর্তূকি যুক্ত ভাড়ার মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হবে যাত্রীকে। বলা হচ্ছে, এটা ভাড়া বৃদ্ধির যুক্তি হিসাবে যাত্রীভাড়া কাঠামো ‘যুক্তিগ্রাহ্য’ করে তোলার উদ্দেশ্যে এটা করা দরকার। অভিজ্ঞ মতে, এটা ক্রমশঃ ভর্তুকি তুলে দেবার একটি কৌশল মাত্র। রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেবার জন্য পরিচিত এই ‘গিভ ইট আপ’ পদ্ধতিই নেয় কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক।
এইভাবে এখন পছন্দভিত্তিক করে পরে যে সেটা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং যথা সময়ে বেসরকারি পরিচালকদের কাছে যেন সেটা গ্রহনযোগ্য হয় এটাই এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য, এমনটাই মনে করেন অভিজ্ঞমহল। ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম যুক্তি হিসাবে বলা হচ্ছে যাত্রীবহন কাজে রেলের খরচের ৫৩% মাত্র এখন ভাড়া থেকে পাওয়া যায়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শুরুতে ২টি ট্রেনের পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে আই.আর.সি.টি.সি -এর হাতে। তাঁরা দরপত্র ডেকে বেসরকারি কোম্পানী নির্বাচন শেষে ঐ ট্রেন দুটি পরিচালনার সম্পূর্ণ ভার দিয়ে দেবেন লীজ্ ভিত্তিতে। টিকিট থেকে পরিষেবা, চালক থেকে টিটি, নিরাপত্তা থেকে প্যান্ট্রি ব্যবস্থা, সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করবে ঐ লীজ গ্রহনকারী কোম্পানি। ক্রমশঃ সমগ্র পরিষেবা হস্তান্তরিত হতে পারবে লীজের অন্তরালে।
রেল সুত্রে খবর, ৬০ জন বেসরকারি চালক ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে। রেলের নিয়ম অনুযায়ী তাদের যোগ্যতা, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও মেডিক্যাল পরীক্ষা ইত্যাদি যাচাই ও নির্ধারণ করা হয়।
এর ফলে, রেল-যাত্রীস্বার্থ ও নিরাপত্তা বিপন্ন তো বটেই, রেলকর্মীদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে উঠল। তাঁরা এটাকে একটা শ্রমিক বিরোধী বিষয় হিসাবেই দেখছেন। খবরে প্রকাশ যে, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে সারা দেশে ৬৫টি ডিভিশনের প্রত্যেকটির অন্ততঃ ৪টি করে ‘ ক্রু-লবি’তে লোকো রানিং ষ্টাফেরা সোমবারের বিক্ষোভে সামিল হয়ে অনশন অবস্থান করেন। পশ্চিমবঙ্গে হাওড়া, শিয়ালদহ প্রভৃতি প্রায় ২০টি স্টেশনে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।