দেশ

নিউজক্লিকের দিল্লী- অফিসে  মোদী সরকারের পুলিশের প্রতিহিংসামূলক হানার প্রেক্ষিতে , নিউজক্লিকের প্রেস রিলিজ:চিন্তন নিউজ পোর্টাল অনুবাদিত


চিন্তন নিউজ:– দেশজুড়ে সাংবাদিকরা মোদি সরকারের রোষানলে। মঙ্গলবার ৩ রা অক্টোবর ভোর থেকেই অমিত শাহ এর পুলিশ নিউজ ক্লিক ওয়েব পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত পঞ্চাশ জন সাংবাদিক, লেখকের বাড়িতে হানা দিয়ে তাদের মোবাইল, ল্যাপটপ কেড়ে নেওয়া হয়। নিউজ ক্লিক এর সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রাপ্ত অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ইউ এ পি এ ধারা যুক্ত করা হয়।

এই তল্লাশি, গ্রেফতারি প্রসঙ্গে নিউজক্লিকের বক্তব্য:

গত ৩রা অক্টোবর ২০২৩ দিল্লী পুলিশের বিশেষ সেল জনপ্রিয় ওয়েবপোর্টাল নিউজক্লিকের অফিস সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বাসস্থানে অতর্কিতে হামলা চালায়। কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত একাধিক ব্যক্তিকে যথেচ্ছ জিঞ্জাসাবাদ করে এবং একাধিক ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে। এই ওয়েবপোর্টাল এর সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ ও অ্যডমিনিষ্ট্রেটর অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করা হয়। কোনোরকম এফ আই আর বা সিজার নোটিশ ছাড়াই সংবাদমাধ্যমের অফিস ও সাংবাদিক – কর্মচারীদের বাড়ি থেকে যাবতীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সমস্ত রিপোর্টিং এর কাজ বন্ধ করতে নির্লজ্জভাবে নিউজ ক্লিকের অফিস সিল করে দেওয়া হয়।

দিল্লী পুলিশের এই হঠাৎ হানার যে কারণ নিউজক্লিক জোগাড় করেছে তা হলো নিউ ইয়র্ক টাইমসে গত কয়েক মাস আগে একটি সাজানো সংবাদ প্রকাশিত হয় যে নিউজক্লিক মোটা অঙ্কের টাকা চৈনিক অনুদানের প্রেক্ষিতে সেই দেশের হয়ে অভিসন্ধিমূলক মিথ্যা তথ্য সম্প্রচার করছে। এই সাজানো অভিযোগ সামনে রেখে নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে ইউ এ পিএ আইনের পাশাপাশি ভারতীয় দন্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমকে ভয় দেখানোর অস্ত্র হিসেবে এই দানবীয় আইনকে ব্যবহার করার জঘন্য সরকারি প্রয়াসকে নিউজক্লিক তীব্রভাবে ধিক্কার জানায়।
নিউজক্লিকের তরফে আমরা বলতে চাই যে গত ২০২১ সাল থেকে কম- বেশি আড়াই বছর দিল্লীর বিজেপি সরকার এই সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি এজেন্সি যেমন ইডি,ই ও ডব্লিউ দিল্লী পুলিশ, এবং আই টি সংস্থা দ্বারা হেনস্থার লক্ষ্যে ধারাবাহিক অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এই বছর গুলোতে সমস্ত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন ল্যাপটপস,গ্যাজেটস,ফোনস প্রভৃতি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সমস্ত ই- মেলস এবং যোগাযোগ পদ্ধতিগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হয়েছে। নিউজক্লিকের যাবতীয় ব্যাঙ্ক তথ্যাবলী, ইনভয়েসেস ,খরচ-খরচা সম্বলিত নথি এবং ফান্ডস এর উৎস গুলো একাধিক বার কারণে- অকারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। নিউজক্লিকের বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান এবং সম্মানীয় ব্যক্তিগন সরকারি আধিকারিক দের অগুনতি প্রশ্নের উত্তর দানে সফল হয়েছেন।আজ অবধি উল্লেখিত কোনো সরকারি এজেন্সি মারফত নিউজক্লিকের বিরুদ্ধে বেআইনি কোনো কার্যকলাপের কিছু মাত্র কোর্ট বা আর কোথাও তুলে ধরা যায় নি। এমনকি বিগত মাসগুলোতে সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে কোনো সরকারি এজেন্সি তলব ও করেনি।একটা সরকার বিভিন্ন দিক থেকে এই ধরনের জনপ্রিয় ওয়েবপোর্টাল সম্পর্কে যখন বিরুদ্ধ কিছু তুলে ধরতে অসমর্থ হয় তখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা যা ভারতের সাধারণ অবহেলিত কৃষক মজুর ও অগনিত নিপীড়িত জনগণের শাসক- শোষণ কে প্রতিনিয়ত তুলে ধরতে চেষ্টা করে, তার কন্ঠরোধ করতে মরিয়া চেষ্টা চালায়।
আমরা নিউজক্লিকের তরফে সোচ্চারে বলতে চাই কয়েকটি   সত্য এবং স্পষ্ট বক্তব্য:

(১) নিউজক্লিক পুরোপুরি একটি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম।
(২) আমাদের সাংবাদিকতার বিষয় নির্বাচন সংবাদ শিরোনামে থাকার যোগ্য।
(৩) নিউজক্লিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চৈনিক খবর আদান-প্রদানে যুক্ত নয়, আগ্রহী ও নয় এবং তা করে ও না।
(৪) নিউজক্লিক তাদের ওয়েবসাইটে চৈনিক অতিকথন বা মিথ্যাভাষণকে প্রশ্রয় দেয় না।
(৫) নিউজক্লিক তাদের ওয়েবসাইটে বিষয় বস্তু প্রকাশের ব্যাপারে নেভিল রয় সিঙঘাম দ্বারা চালিত হয় না।
(৬) নিউজক্লিক বিশ্বস্ততার সাথে তাদের টাকা – পয়সা লেনদেনের যাবতীয় তথ্য দিল্লী হাইকোর্ট এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এর নিয়ম অনুসারে সংগঠিত করে।আজ অবধি নিউজক্লিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবর ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে ও যে কেউই তা ইচ্ছেমতো দেখতে ও পাচ্ছে। দিল্লী পুলিশের বিশেষ সেল কোনো একটি প্রবন্ধ বা ভিডিওকে ও  চৈনিক প্রোপাগান্ডা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে নি। বরং দিল্লী পুলিশের বিশেষ সেলের প্রশ্নগুলো ছিল দিল্লী তে ঘটা জাতিদাঙ্গা ও কৃষক প্রতিবাদ সভা বিষয়ক যা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক এবং বর্তমান পুলিশি হামলা যে বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা বুঝিয়ে দেয়।
পরিশেষে কোর্ট ও বর্তমান বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আমরা বলতে চাই যে নিউজক্লিক ভারতের সংবিধান মেনে নিজেদের জীবন ও জীবিকার ( সৎ সাংবাদিকতা) স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শেষদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।