দেশ

বিজ্ঞানমনস্কতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া


মিঠুন ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:৬ই এপ্রিল:- প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যথেষ্ট ধুমধাম করে গতকাল রাত ন’টা থেকে ন’টা ন’ মিনিট এই নয় মিনিট ধরে বিজ্ঞানমনস্কতার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হলো দেশব্যাপী , কিন্তু বিষয়টা কি শুধু এরকম হওয়ার ছিল? ভেবে দেখতে হবে ।

ভেবে দেখতে হবে আজ সারা বিশ্বব্যাপী যখন মানবসভ্যতা চ্যালেঞ্জের মুখে , পৃথিবীর ১৩১ টা দেশ এই করোনার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় লকডাউন পিরিয়ডে চলছে ।

আমেরিকা – ইটালির মতন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রথম সারির দেশগুলো আটকাতে পারছে না মৃত্যু-মিছিল আটকাতে পারছেনা মহামারী ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারতবর্ষে করোনা নামক ভাইরাস আটকাতে কখনো সর্বাধিনায়ক থালা-বাটি বাজাতে বলছেন , কখনো মোমবাতি জ্বালিয়ে অকাল দিওয়ালি পালন করতে বলছেন। আসলে সবটাই বিজ্ঞানের থেকে বহু বহু যোজন দূরে। একদিন থালা-বাটি বাজাতে গিয়ে দেশব্যাপী একটি বিশেষ দলের সমর্থকদের উন্মাদনায় জনগণ রাস্তায় নেমে গেল বিজয় উৎসব পালন করলেন, আবার গতকাল যুক্তি ও বিজ্ঞানকে দূরে রেখে আবেগময় মুহূর্তকে ভর করে অকাল দিওয়ালি পালন হলো।

একবার ভাবা দরকার ঠিক কি চাইছে সরকার?
আজকের এই কঠিন পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্মী ডাক্তারদের কাছে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই , যখন লকডাউন করেও জনগনকে ঘরের ভেতরে রাখা যাচ্ছে না আবার অনেক জায়গায় প্রশাসনের অতি সক্রিয়তায় গরীব মানুষ আতঙ্কিত ঠিক সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সরকারের দায় বর্তায় দেশের গরীব মানুষ – নিম্নমধ্যবিত্ত -মধ্যবিত্ত – দিনমজুর – ঠিকাশ্রমিক মানুষগুলোর ন্যূনতম খাদ্য এবং চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা , কিন্তু সরকার সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে বিষয়টা যেন পেট্রোল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা ।

এমন ধর্মান্ধতা এমন অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া এমন যুক্তিহীনতা দেখে দেশের কিছু মানুষ যদি মনে করে বসে যে ক্রমশ আমরা পিছিয়ে পড়ছি যদি কেউ মনে করে দেশটা ক্রমশ সতীদাহ প্রথার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা কিন্তু কোনোভাবেই সমাজের জন্য শুভ বার্তা বয়ে আনতে পারে না। এক সময় বাল্যবিবাহ ছিল সমাজস্বীকৃত যে সময় স্বামীর মৃত্যুর পর জ্বলন্ত চিতায় তার স্ত্রীকে জ্বালিয়ে দেওয়া হতো এবং পাশে দাঁড়িয়ে জনগণ উল্লাসে ফেটে পড়তো চিৎকার করে ঢাক ঢোল বাজিয়ে শঙ্খ ধ্বনি দিয়ে উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ করা হতো , জানেন কেন করা হতো? করা হতো জ্বলন্ত চিতায় একজন মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়ার সময় তার আর্তনাদের আওয়াজ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঠিক যেভাবে আজকে আমাদের দেশে এবং বিভিন্ন রাজ্যে সরকারগুলো জনগণের আর্তনাদকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে শিক্ষা স্বাস্থ্য নাগরিক পরিষেবার আওয়াজ যাতে বাইরে না বেরোয় , এবং এই প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়িত করার জন্য রাখা হয়েছে কিছু পেটোয়া বাহিনী যারা যুক্তি কিংবা বিজ্ঞানের ধার ধারবেনা , ঠিক আজকে থেকে ৭০০- ৮০০ বা ২ হাজার বছর আগে রাজার নির্দেশে যেভাবে সৈন্যদল বিনা মস্তিষ্ক ব্যবহারে রণক্ষেত্রে হাজির হতো।

মনে রাখতে হয়, এক সময় জার্মানিতে প্রচন্ড জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রনায়ক দেশ চালাতেন সেই এডলফ হিটলার কে কিন্তু সেই সময় সে দেশের নাগরিকরা ভগবানের আসনে বসিয়ে রেখেছিলেন , কিন্তু জার্মানি সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার পরে যখন বোঝার মত আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না ঠিক সেই সময় থেকে আজকের দিন পর্যন্ত সবাই বুঝতে পারছে জার্মানির আজ পর্যন্ত সময়কালের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল এডলফ হিটলার , জার্মানির একসময়ের ভগবান।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।