সঞ্জিত দে চিন্তন নিউজ:- ৫ এপ্রিলঃ- ঈশ্বর রুপি মানুষ গুলোকে চিনতে সাহায্য করেছে করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা একদম সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে মানব প্রাচীর তৈরি করে মানুষকে রক্ষা করার প্রয়াস করে যাচ্ছেন। এই রকম অনেক নজির ইতিমধ্যে দেখা গেছে। আজ এইরকম এক জনের কথা তুলে ধরা হচ্ছে, যিনি মা দুর্গার মতো অসুর রূপী এই করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন। ওনার লড়াইটা কিন্তু আর পাঁচ জনের মতো নয়। তিনি এই মুহূর্তে ৬ মাসের অন্তঃসত্বা।আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক শ্রেয়সী ঘোষ । আজকের দিনে ব্লক প্রশাসনের কর্মীদের যেখানে দম ফেলার সময় নেই,সেখানে ইনি তো ব্লক প্রশাসনের শীর্ষে বসে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন । নিজের এই শারীরিক অবস্থার কথা ভুলে গিয়ে কাজ করে চলছেন ।নিজের ও সন্তানের কথা চিন্তা করে কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে চলে যাননি তিনি, বরং ওই মারণ ভাইরাসের চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাচ্ছেন তিনি। চাইলেই হয়তো বাড়তি সুবিধে তিনি নিতে পারতেন । কারন শ্রেয়সী ঘোষের স্বামী শুভঙ্কর রায় এই জেলাতেই জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন আধিকারিক পদে কর্মরত ।
করোনা যে দেশ জুড়ে মহামারীর সৃষ্টি করেছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। গোটা বিশ্ব জুড়ে এই মহামারী থাবা বসিয়েছে । তবে আলিপুরদুয়ার জেলাতে এখনো কোনো কোভিড ১৯ মানে করোনা আক্রান্ত রোগী মিলেনি । তবে করোনা মোকাবেলার লড়াইতে অন্যান্যদের মত অন্তঃসত্ত্বা বিডিও কাজ করে চলছে অদৃশ্য শত্রুর সাথে । কিছুদিন আগেই জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির এমনি একজন স্বাস্থ্যকর্মীর কাহিনী শোনা গেছিল, যিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্তেও করোনা মোকাবেলার লড়াইতে সামিল হয়েছেন । তেমনি এক আধিকারিক নিশব্দে নিজের কষ্টকে কষ্ট মনে না করে করোনা লড়াইতে সামিল হয়েছেন।
আলিপুরদুয়ার জেলার অন্যান্য ব্লকের থেকে অনেকটাই বড় আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লক । এই ব্লকে মোট চারটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। এই সেন্টার গুলির গুরুদায়িত্ব এখন ব্লক আধিকারিক শ্রেয়সী ঘোষ, ওনার ওপরে। নিয়মিত এই সেন্টারগুলিতে ভিজিট করা সেই সাথে স্বাস্থ্য কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখা সবই কিন্তু ওনাকে সরজমিনে করতে হচ্ছে। যেখানে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের সব থেকে বেশি সতর্ক থাকার কথা বলে থাকে এই সময় স্বাস্থ্য দপ্তর । আর সেই জায়গায় নিজের কর্তব্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেননি তিনি । কাজও নিষ্ঠার তাগিদেই কিন্তু প্রশাসনিক বৈঠক,স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন , ত্রাণ বিলি সব কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কারন তিনি নিজে তো ব্লকের প্রশাসনিক প্রধান। তাই দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সরে আসতে নারাজ।
এর আগেও জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির বিডিও থাকা কালীন শ্রেয়সী ঘোষ জেলা আধিকারিকদের সর্বদা গুড বুকেই ছিলেন । তার কাজের জন্য । বন্যার সময় নিজে জলে নেমে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান।নিজের হাতে সেই সময় এক কমোর জল পেরিয়ে ত্রাণ পৌঁছতে দেখা গিয়েছিলো তাকে ।সর্বদা নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখতেই ভালো বাসেন নিজে কে। সেই সময় জেলা প্রশাসনের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন শ্রেয়সী দেবী। মন্ত্রীরাও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে তার কাজ দেখে প্রশংশায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন । তিনিযে প্রকৃত কাজের মানুষ এবার আরো একবার সেটা প্রমান হয়ে গেলো।
আলিপুরদুয়ার ১ নং ব্লকের বি ডি ও শ্রেয়সী ঘোষ বলেন , “ এখন কাজের খুব চাপ রয়েছে ।এই ব্লকে মূখ্যমন্ত্রী করোনা হাসপাতাল খুলেছেন । চার টি করেন্টাইন সেন্টার হচ্ছে । বাড়ি বসে কি সব কাজ করা যায় । বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করতে হয় ।ত্রান যাতে সঠিক ভাবে সবাই পায় এই কঠিন সময় সে গুলো নজর রাখছে হচ্ছে । তাই নিজের শরীরের কথা ভাবলে হবে এই কঠিন সময় সরকার এবং গোটা দেশ যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তাতে আমিও পাশে থাকতে চাই । আমার কাজে কাজ টা পূজা ।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর মোহন শর্মা বলেন,” এই মুহূর্তে তিনি যে ভাবে কাজ করছেন তা প্রসংশার উর্দ্ধে । উনি যে কাজ করে চলেছেন সেটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না। উনি এত বড় ব্লক দক্ষতার সাথে সামলাচ্ছেন এই কঠিন সময়ে । একজন সরকারি অফিসার চাকরি জীবন শুরু করার আগে সর্বদা দেশের প্রতি মানুষের জন্য সেবার শপথ বাক্য পাঠ করেন, বিডিও ম্যাডাম তার শপথ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। ওনাকে দেখে অনেক মহিলা ও পুরুষ কর্মীরাও উজ্জীবিত হবেন।
শ্রেয়সী ঘোষের স্বামী শুভঙ্কর রায় জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন আধিকারিক তিনি বলেন , এখন ক্রাইসিস সময় । বাড়িতে বসে থাকার উপায় নেই । ঘরে থাকলে চলবে কি করে । তাই আমি ওকে সাহস দেই । এখন লড়াইয়ের সময় তাই বাড়িতে বসে থাকলে হবে কি করে । ওনাদের একটি সন্তান রয়েছে তাকে মায়ের কাছে রেখে দুজন কাজ করে চলেছেন। করোনা মোকাবেলা লড়াইতে পেছতে রাজি নয় ।