শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে প্রাক্তনীরাই এখন নিজেদের পাড়ায় বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক-শিক্ষিকা


সঞ্জিত দে ধূপগুড়ি : চিন্তন নিউজ:- ২৯ সেপ্টেম্বর:- –   ওরা কেউ কলেজ পড়ুয়া, কেউ বা চাকুরে অথবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। লকডাউনে ওরাই এখন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে প্রাক্তনীরাই এখন নিজেদের পাড়ায় বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করছেন।  বিদ্যালয়  বন্ধ দীর্ঘ  সময় ধরে,  বই মুখো হতে অনীহা  বাড়ছে পড়ুয়াদের  তাই আর কালক্ষেপ না করে ছাত্র ছাত্রীদের ডেকে হাতে বই খাতা কলম নিয়ে পড়তে বসানোর উদ্যোগ।এভাবেই  একদিকে স্কুলের  সুবর্ন জয়ন্তী  পালনের অভিনবত্ব  আরেকদিকে পড়ুয়াদের  বই খাতার সাথে সম্পর্ক  গড়ে তোলা।

আলিপুরদুয়ার  জেলার   ফালাকাটা ব্লকের ধনীরামপুর ১ অঞ্চলের বেগম রাবেয়া খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের শিক্ষার পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়টি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা  ব্লকের এবং জলপাইগুড়ি জেলার  ধূপগুড়ি  ও সদ্য গঠিত  বানারহাট ব্লকের শেষ সীমানায় অবস্থিত হওয়ায় জলপাইগুড়ি জেলার বহু ছাত্রছাত্রী এখানে পড়তে আসে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ দাস বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল দেখার প্রবণতা বাড়ছে, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেছে। তাদেরকে পড়াশোনায় উৎসাহি করতে ও সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধনীরামপুর ১ অঞ্চলের শালবাড়ি এলাকার বাড়ি প্রাক্তন ছাত্র জীবন বর্মন প্রায় কুড়ি জনকে পড়ান। জীবন বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করি আমরা, এখানে বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র। দরিদ্র পরিবারে অর্থনৈতিক ভাবে লকডাউনের প্রভাব পড়েছে, ফলে ছাত্রছাত্রীদের একটা অংশ শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত হয়। জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের শেষ সীমানায় থাকা আর এক প্রাক্তন ছাত্র সাহাজাদ আলম তার বাড়িতে দশ জন পড়ুয়াকে পড়াশোনায় সাহায্য করছেন। তিনি বলেন, গত দু বছরের বেশি সময় লকডাউন চলায় পড়ুয়াদের মনে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছে। পড়াশোনার প্রতি তাদের মনোযোগী করতে বিদ্যালয়ের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উৎসাহে প্রাক্তন‌ ছাত্রছাত্রীরা  বিদ্যালয়ে পাঠরত পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর দশ থেকে কুড়ি জন ছাত্রছাত্রীকে পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। গত তিনমাস ধরে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী সকল ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করাচ্ছেন স্টাডি সেন্টারে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্টাডি সেন্টারগুলিতে নিরীক্ষণ চালান। স্টাডি সেন্টারগুলিতে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রয়েছ। শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, দুয়ারে সরকারের মত প্রকল্পে যদি কোভিড বিধি উল্লঙ্ঘন করে জনসমাবেশ হতে পারে, কোভিড বিধি বজায় রেখে বিদ্যালয় চালু করা যাবেনা কেন?

করোনা অতিমারির জেরে দীর্ঘ দুই বছর লকডাউন জারি রয়েছে। লকডাউনে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস চালু থাকলেও, সমস্ত শিক্ষার্থীর পক্ষে অনলাইন ক্লাস করার মত অনুকূল অবস্থা নেই। তাছাড়া অনলাইন মাধ্যমে একই সঙ্গে অধিক শিক্ষার্থীকে যোগদান করিয়ে পাঠদান সম্ভব হয় না। অন্যদিকে এবছর বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উৎযাপন করা হবে। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উৎসাহে প্রাক্তন পড়ুয়ারা নিজেদের বাড়ির পাশে থাকা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুবছরের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনের প্রভাব পড়েছে বলে জানালেন প্রাক্তন ছাত্র তথা শিক্ষকরা। তারা বলেন, অনেক কিছুই ভূলে গিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। সামগ্রীক ভাবে পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ কমে গিয়েছে।

স্টাডি সেন্টারে পাঠরত ছাত্রছাত্রীরা বলেন, দীর্ঘ দুই বছর বিদ্যালয়ের পরিবেশ না পাওয়ায় স্টাডি সেন্টারে পড়াশোনা করে ভালো লাগছে। তারা চায় বিদ্যালয় চালু হোক। অস্টম শ্রেণীর ছাত্র বিকি বর্মন ও ছাত্রী জয়িতা বর্মন বলেন, স্টাডি সেন্টারে বই, খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়তে ভালো লাগছে, এতদিন বাড়িতে সেইভাবে পড়াশোনা করা হয়নি। এখানে দাদারা আমাদের বাড়ির কাজ দিচ্ছেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রতিদিন এসে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। অভিভাবক তথা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুনীল কুমার বর্মন বলেন, বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকমুখী করে তুলবে, লকডাউনে বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক ছেদ‌ হয়েছে। বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভালো পদক্ষেপ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।