চৈতালী নন্দী:চিন্তন নিউজ:১৪ই জানুয়ারি:—এক নতুন দিগন্তে ভারতের ছাত্র আন্দোলন, রূপে,বর্ণে,ছন্দে ,গানে একেবারে অন্য ধারার।।
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের এই বিচিত্র রূপ এর আগে খুুব বেশী দেখা যায় নি। এই নতুন প্রজন্ম ছাত্র আন্দোলনকে নিয়ে গেছে এক অন্য স্তরে ,অন্য মাত্রায় যারা নিজেদের ছাত্রজীবনে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন , তাদের কাছে এই আন্দোলন চরিত্রে , ছন্দে একেবারে অন্যরকম। এই ছাত্র আন্দোলনকে কূর্ণিশ জানাতে হয়। এতদিন বিভিন্ন দাবী দাওয়া আদায়ে,কখনও বা কোনো সরকারি ফতোয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখা গেছে। কিন্তু সিএএ র বিরুদ্ধে সদ্য একমাসে পা দেওয়া শাহিনবাগের আন্দোলন চরিত্রে একেবারে সর্বধর্ম সমন্বয়ের ,মিলে মিশে যাওয়ার গল্প। শিখ ,হিন্দু, মুসলিম ,খ্রীষ্টান সবাই সবার সঙ্গে একাকার। নির্ভয়ে একসঙ্গে একমঞ্চে একীভূত।
এ দেশের মানুষের এক বিশাল পাওনা। এখানে নেই কোনো ধর্মভেদ ,নেই কোনো লিঙ্গ বিভেদ বা কোনো বর্ণভেদ। এ যেন কোনো বৃহত্তর স্বার্থে,গনতান্ত্রিক বোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া মানবগোষ্ঠী। সমাজ বদলের ডাক যাদের কন্ঠে।মহৎ নাগরিক অধিকার যাদের আদর্শ।
এই আন্দোলনের আরও একটা উল্লেখযোগ্য দিক হ’ল এতে ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীদের ও সমান অংশগ্রহণ। যা আগে দেখা যায়নি। তাছাড়া শুধুমাত্র ছাত্রীরা নয় সর্বস্তরের মেয়েদের এই আন্দোলনে যোগদান বুঝিয়ে দিচ্ছে মেয়েরা এখন সামনের সারিতে থাকতে দ্বিধা করেনা। যা সম্ভব হয়েছে ছেলেমেয়েদের সহজ মেলামেশার মধ্যে দিয়ে।
স্বাধীনতা আন্দোলন দেখেনি এ যুগের অনেকেই, তবে আন্দাজ করা যায়, এও যেন এক স্বাধীনতা আন্দোলন যা এসেছে গনআন্দোলনের রূপে। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সমাজ বদলের একটা ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।এই শাহিনবাগের আন্দোলন যা ইতিমধ্যেই সমগ্র দেশ তথা বিশ্বের নজরে এসেছে, তার ব্যাতিক্রমী চরিত্রের জন্যে। প্রবল ঠান্ডায় বৃদ্ধা থেকে শিশু, গৃহবধূ থেকে ছাত্রী, শ্রমিক থেকে চাকুরীরত কেউ বাদ নেই,একসাথে ই চলছে নামাজ পাঠ ,গান,গীতাপাঠ,কীর্তন, বাইবেল পাঠ সব। এর সঙ্গেই চলছে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ। এই যে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক ধাক্কায় সব বিভেদ ঘুচিয়ে কাছাকাছি আসা তা প্রত্যাশা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই ছন্দে ছন্দে ডাফরি বাজিয়ে কানহাইয়ার তোলা আজাদির স্লোগান রক্তে দোলা দেয়।এ এক নতুন উপলব্ধি…নতুন প্রত্যাশা।