কলমের খোঁচা

কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্ত স্মরণে


তুলসী কুমার সিনহা: চিন্তন নিউজ:১৩ই জুলাই:- ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অবিসংবাদী নেতা ছিলেন কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্ত। কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্ত ১৯১০ সালের ১৩ই জুলাই অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কৌরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পেশায় একজন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার। তিনি কলেজে পাঠরত অবস্থায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তিনি বিশ্বাস করতেন সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতের স্বাধীনতা আদায় করা সম্ভব।এরপর তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কলকাতা থেকে শুরু করেন।১৯২৯ সালে কলকাতার মেছুয়া বাজার বোমা বিস্ফোরণ মামলায় সতীশ পাকরাশি,সত্যব্রত সেন,সুধা্ংশু দাসগুপ্ত এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পুলিশ প্রশাসন পেশ করতে পারে নি । কিন্তু ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে তাঁকে বিভিন্ন জেলে আট বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল।১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

১৯৩৮ সালের ১লা মে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বন্দরের ডক শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত হন। তারপর তিনি পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পার্টিকে বেআইনি ঘোষণা করা হলে পার্টির নেতা ও কর্মীদের গোপনে কাজ পরিচালনা করতে হতো। কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্তকে এই সময়ে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৪২সালে পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে কমরেড দাসগুপ্ত জেল থেকে ছাড়া পান।

কমরেড দাসগুপ্ত মনে করতেন যে পার্টির মুখপত্র না থাকলে পার্টির অগ্রগতি সম্ভব নয়। তিনি ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে দৈনিক স্বাধীনতা পত্রিকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
কমিউনিস্ট পার্টির রণনীতি ও পার্টির লাইন নিয়ে পার্টির অন্তর্মুখী লড়াইয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সিপিআইএম প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।১৯৬৪ সালে সিপিআইএম এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তিনি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন। কমরেড দাসগুপ্তের মূল্যায়ন করতে হলে প্রথমেই তাঁর আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হয়।১৯৬৪ সালে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রতিটি জেলায় মজবুত সংগঠন গড়ে তোলেন। একটা ছোট পার্টিকে হাতে কলমে বিশাল পার্টিতে পরিণত করার অনন্য কারিগর হলেন প্রমোদ দাসগুপ্ত।তা‍ঁর প্রতিটি জেলায় সাধারণ কর্মীদের সঙ্গেও ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য হিসাবে তিনি ত্রিপুরা,আসাম ও উড়িষ্যায় সংগঠনের ভিত তৈরি করে গেছেন।তিনি কোনদিন কোনো নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেননি।এহেন প্রমোদ দাসগুপ্তকে সত্তর দশকে অনেক অবাঞ্ছিত সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় কিন্তু তিনি ছিলেন অদম্য লড়াকু কমিউনিস্ট।১৯৮২ সালের ২৯শে নভেম্বর কমরেড প্রমোদ দাসগুপ্তের মৃত্যু হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।