কলমের খোঁচা

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্মদিনে,তাঁর লেখনীর সান্নিধ্যে কিছুটা সময়।


মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৯শে অক্টোবর:-
“যা গিয়ে ওই পুঁই মাচাটার কাছে দাঁড়া”।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
কবিতা তখনই যথার্থ কবিতা হয়ে ওঠে, যখন তার সার্বজনীন আবেদন থাকে। আমরা প্রত্যেকেই শৈশব নিয়ে নষ্টালজিয়ায় ভুগি। আমাদের ফেলে আসা সুখময় অতীত আমাদের একইসাথে আনন্দ ও দুঃখ দেয়। কবির রচিত আবহমান কবিতা আমাদের ফিরিয়ে দেয় সেই শৈশব।কবির জীবনে ঠিক এমনটাই ঘটেছিলো। বাবা মা কলকাতায় থাকলেও তাঁর শৈশব কেটেছে অধুনা বাংলাদেশের চান্দ্রে গ্রামে ঠাকুরদা, ঠাকুরমার স্নেহের স্পর্শে। সবমিলিয়ে দূর্দান্ত শৈশব। গ্রামের প্রকৃতি তাঁকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে গ্রামের পথ,ঘাট প্রান্তর তাঁকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে। সেই স্বাদ চেটেপুটে নিয়ে তিনি বেড়ে উঠেছেন। তাই ঠাকুরদার মৃত্যুর পর তাঁকে কলকাতায় বাবা, মার কাছে আসতে হলেও এই শৈশবের হাতছানি তিনি সারাজীবন উপভোগ করেছেন তাঁর লেখায় তারই প্রকাশ।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কবিতায় হাতেখড়ি। শৈশবই হয়তো ঠিক করে দিয়েছিলো জীবনের গতিপথ। বড়ো হয়ে লেখালেখির জগতেই বিচরণ করেন। প্রথমে “হর্ষ” পত্রিকার মাধ্যমে সাহিত্য জগতে অনুপ্রবেশ। দৈনিক প্রত্যহ পত্রিকায় প্রথম সাংবাদিকতা । আনন্দমেলায় তাঁর সম্পাদনার কথা আমরা জানি। তবে তাঁর আক্ষেপ এই সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তার ভালোবাসা কবিতাকে কম সময় দিয়েছেন।

একজন কবি শুধু কল্পনার জগতে বিরাজ করেন না, বাস্তবের মাটিতে ধুলোতে বিচরণ করেন। কবির কাজ সময়কে ধরা। তিনি চল্লিশের দশকের কবি ছিলেন। এই সময়ে শাসকের অপশাসন, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা তাঁকে বেদনাহত করতো। সেখান থেকেই তাঁর অমর সৃ‌ষ্টি” উলঙ্গ রাজা” । এই কবিতার মাধ্যমে তিনি শুধু শাসকশ্রেণীকে আক্রমণ করেননি, আক্রমণ করেছেন শিরদাঁড়াহীন মনুষ্যসম্প্রদায়কে ,যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। তাই একটি শিশুর মুখ দিয়ে বলেছেন, “রাজা তোর কাপড় কোথায়”। এই কবিতার আবেদন সার্বজনীন।

তাঁর লেখাালেখির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন, সাহিত্য অ্যাকাডেমি কর্তৃক পুরস্কার ও আরো নানাবিধ পুরস্কার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি,লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সন্মানে সন্মানিত করেন।

তাঁর বিস্তর লেখালেখি নিয়ে আলোচনা করা এই স্বল্প পরিসরে কার‌ও পক্ষে দুঃসাধ্য। তিনি কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। তাঁর কবিতাগুলোও এক একটি গল্প। অমলকান্তি তাঁর কৈশোরের বন্ধু।। তাঁর বাড়ির দৈন্যদশা এমনই যে ঘরে রোদ ঢুকতো না। তাই সে নিজেই বড়ো হয়ে রোদ্দুর হয়ে উঠতে চেয়েছিল। এই লেখাটি আজও সমান প্রাসঙ্গিক। আজও কতো কৈশোর অকালে ঝড়ে যায়।

কবিকে আমরা হারিয়েছি, কিন্তু তাঁর লেখনী নিয়ে তিনি উত্তরসূরীদের মধ্যে থাকবেন। মধ্যবিত্তশ্রেণী মাতৃ ভাষা ভুলে যেভাবে ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে ধাবিত হচ্ছে , তা দেখে ভয় হয়, এই মানুষেরা নিজের সংস্কৃতিসহ বাঁচবেন তো!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।