দেশ বিদেশ

আয় কমার কারনেই ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির গ্রাফ নিম্নগামী, স্বীকার করে নিলো আইএমএফ


চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ২৫ ডিসেম্বর: সোমবার গভীর রাতে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট পেশ সংক্রান্ত আলোচনায় আইএমএফ প্রধান রনিল সালগাডো বলেন, ভারতের নন ব‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান গুলির (NBFC) নগদে টান পড়ার কারনে মূলধন সৃষ্টির কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে ধাক্কা খাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। মানুষের, মূলত গ্রামের মানুষের আয় কমায় চাহিদা কমছে। এর সঙ্গে রয়েছে জিএসটির প্রভাব , যা ভারতের অর্থনীতি কে আরও নিম্নগামী করেছে।

মোদি সরকার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট পেশ করলেও তার অন্তঃসারশূন্যতা সহজেই প্রকাশ হয়ে পড়ে। জিডিপি র হার ৭% ঘোষণা করা হলেও তা দ্রুতই নামতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় একের পর এক শিল্পের উৎপাদন। বারে বারে কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে ঋন মকুবের তোফা দিয়েও আর্থিক মন্দাকে আটকানো যায়নি।

ভারতের এই আর্থিক বিপর্যয় থেকে নিস্তার পাওয়ার যে সহজ কোনো পথ নেই তা আইএমএফ স্বীকার করে নিয়েছে। ভারতের অর্থমন্ত্রীর কাগুজে রিপোর্ট তাদের বিপথে চালিত করার কারনেই তারা ভূল পথে চালিত হয়েছিলেন। এখন ভারতের প্রকৃত অর্থনীতির চিত্র তাদের হতবাক করে দিয়েছে। তাঁরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চটজ‍লদি কোনো উপায় নেই, সময় লাগবে। তবে এই মন্দা পরিকাঠামোগত নয়।যদিও তাঁরা কিছু সংস্কারের দাওয়াই বাতলে দিয়েছেন।

বামপন্থীদের মতে নয়া উদারবাদের প্রভাবেই এদেশে বেড়েছে বেকারি ও ছাঁটাই। উৎপাদন হঠাৎ কমে যাওয়াই এর কারন। আগামী ৮ই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন গুলির ডাকে যে সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে, ন‍্যুনতম মজুরি বৃদ্ধি তার অন‍্যতম দাবি। দেশে মজুরি কমার ফলে কমছে ক্রয়ক্ষমতা, গভীর হচ্ছে দেশের আর্থিক সঙ্কট। কেন্দ্রীয় সরকার না মানলেও মানুষের এই ক্রয়ক্ষমতা কমাই এই আর্থিক মন্দার প্রকৃত কারন বলে মনে করে আইএমএফ। বর্তমানে বৃদ্ধির হার ৪.৫%, যা বিগত ২৬ বছরে  সর্বনিম্ন। যা আরও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও তাঁরা এই মন্দা কাটাতে সেই পুরনো পথই দেখালেন, যা বামেদের দেওয়া পথ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত।

মোদি সরকার বার বার সুদের হার কমিয়ে, স্বল্প সুদে ঋন দিয়ে যে অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর ব‍্যর্থ চেষ্টা করছেন, তাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে বাড়েনি শিল্পে বিনিয়োগ। বেশী সুদ কমালে মূল‍্যবৃদ্ধির বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।আইএমএফ এর থেকে মুক্তি পেতে যে সব আর্থিক সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে তা হলো, জনকল‍্যান প্রকল্পে ভর্তুকি কমাতে হবে, ব‍্যাঙ্কের বেসরকারি করন, ভূমি ও শ্রম আইন সংস্কার প্রভৃতি যা ইতিমধ্যেই ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।মোদির নয়া উদারবাদের পথ যে সঠিক পথ নয় তা বারে বারে প্রমাণিত হলেও মোদী সরকার অবিচল। মূলত দেশ তথা দেশের অর্থনীতি পরিচালনায় অদূরদর্শী নীতিই এই অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনার প্রকৃত কারন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।