জেলা

জ্ঞানকেন্দ্রে অজ্ঞানতা


অর্ণব রায়,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ:৯ই মার্চ:– লাইব্রেরী আমার একটা দুর্বলতার জায়গা। বিদ্যাসাগরের দুশো বছর উপলক্ষ্যে  গত বছর লকডাউনের মধ্যে কয়েকটা ফেসবুক লাইভ-অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে হয়েছিল। একদম শেষেরটির আয়োজক ছিল ” চিন্তন- thought of today”-  গানে, প্রশ্নে , উত্তরে, আলোচনায় অনুষ্ঠানটি  হয়েছিল জমজমাট। এই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক যিনি ছিলেন তিনি হুগলী জেলায় বিজ্ঞান মঞ্চের দীর্ঘদিনের সংগঠক। তিনি বছর তিনেক আগে অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক। ফোনে আলাপচারিতায় অনেক কথার মধ্যে এল গ্রন্থাগারের কথা। বললেন, বহু লাইব্রেরী আছে  গ্রপ ‘ডি’ র একজন যে কর্মরত আছে সে কার্যত চালায় লাইব্রেরীয়ান / আ্যসিস্টান্ট লাইব্রেরিয়ান ও অন্যন্য কর্মী নিয়োগ বন্ধ গত কয়েক বছরে ধরে।

বই কেনার জন্য অনুদান ব্যবস্থা প্রায় তুলেই দেওয়া হয়েছে । বহু লাইব্রেরী ধুঁকছে। অথচ আগের সরকার শুধু  নিয়োগ  নয়, বহু নতুন লাইব্রেরী স্থাপন, পুরনো লাইব্রেরী গুলির রক্ষণাবেক্ষণ , কিছু আধুনিকীকরণ করেছিল। হয়ত আরো করা দরকার ছিল। কিন্তু যা হয়েছিল , সব  শেষ হয়ে যাচ্ছে। এগুলি  কিছুটা জানতাম। ওনার কাছ থেকে আরো অভিজ্ঞতার কথা শুনলাম। মিডিয়াও তুলে ধরেনা।

রাইটার্সের সংস্কারের নামে তার বিখ্যাত লাইব্রেরীটি ভাঙা হয়েছে। অমূল্য বহু  সংগ্রহ ছিল বলে শুনেছি। ১৯১১ অবধি যেহেতু ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা , সেই লাইব্রেরীতে নাকি মূল্যবান বহু নথিপত্র ছিল, যা গবেষকদের অনেক কাজে লাগত। সব ডাম্পিঙ করে একজায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে শুনেছি। রাইটার্সের কর্মীদের  আ্যসোসিয়েশনের রিক্রিয়েশন ক্লাবের লাইব্রেরীতে সংগ্রহে ছিল অনেক পুরনো বই। তথাকথিত সংস্কারের নামে সে ঘর ভাঙা হয়েছে- অনেক বই সব সযত্নে সরানো যায়নি- নষ্ট হয়েছে। কি এবং কেন যে হচ্ছে আট বছর ধরে তথাকথিত সংস্কার  কে জানে!

স্বৈরাচারী শাসকদের বইয়ের ওপর রাগ নতুন নয়। ইউরোপে হিটলার বই পুড়িয়েছিল। মুসোলিনী অবশ্য ভাল লেখক ছিল – বই না পুড়িয়ে নিজের মিথ তৈরী করাতে  লেখা বা বই প্রকাশে জোর দিয়েছিল। মধ্যযুগে আলাউদ্দিন খিলজি বইশত্রুতার পরিচয় দিয়েছিলেন নালন্দার পৃথিবীবিখ্যাত লাইব্রেরীটি ধ্বংস করে , তবে ঐতিহাসিকের মধ্য বিতর্ক আছে যে – উদ্দেশ্য তার ছিল বইনাশ নয়, নালন্দার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের  বিনষ্ট করা। তার আগে চার্বাকের সব পুঁথি ধ্বংস করেছিল বৈদিক বা হিন্দু ঋষিরা। প্রাচীন ভারতে বস্তুবাদী দর্শনের উজ্জ্বল ঐতিহ্য চার্বাক দর্শনের সূত্র পাওয়া গেছে যখন ভাববাদীরা তার বিরোধিতা করেছে  প্রসঙ্গ তুলে। বৌদ্ধ মঠ ও বিহার ধ্বংস করতে গিয়ে বহু বৌদ্ধ পুঁথিও পুড়িয়ে দিয়েছে শঙ্কর -অনুবর্তীরা।

অন্তর্জাল, মোবাইল , কম্পিউটার যতই থাক, বইয়ের বিকল্প বই।‌ বইয়ের বন্ধুত্ব সবসময় থাকে। ইংরেজ কবি সাদীর কথায় বই  হল  “My Never falling friends are they”। আর, সাহিত্যিক জন রাস্কিন বলেছিলেন , বড় বড় মনীষী, রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী প্রমুখরা নাকি আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন একমাত্র তাদের বইয়ের মধ্যে দিয়ে। তাই, সে বইয়ের থেকে দূরে থাকা অসম্ভব। এই বই-অযত্নকারী , লাইব্রেরী ধ্বংসকারীরা অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন ।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।