কলমের খোঁচা

‘কত অজানারে’……… হেঁটে চলে বেড়ানো গাছ! ক্যাশাপোনা পাম গাছ ( ওয়াকিং পাম)


মামনি দাস,বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ১৬/০৭/২০২৩:– গাছ ! তাও আবার হাঁটতে পারা গাছ ! হ্যাঁ, এইরকমই এক আজব গাছ ‘ওয়াকিং পাম ‘—কে নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

গাছেরও যে প্রাণ আছে ,তা সবাই জানে ,কিন্তু তাই বলে হেঁটে চলে বেড়ানো গাছ ? অবাক হচ্ছেন নিশ্চই ।গাছ আবার হাঁটতে পারে নাকি ?
এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত তিন লাখ নব্বই হাজার নশো প্রজাতির গাছের মধ্যে আছে অপুষ্পক ,সপুষ্পক বা মাংসাশী গাছ । কিন্তু হেঁটে চলা গাছের কথা কি কখনো শুনেছেন ?

না , কোনো অলৌকিক ঘটনার কথা বলছি না । দক্ষিণ আমেরিকার গহীন ক্রান্তীয় অরণ্যে আছে এমনই এক আশ্চর্য উদ্ভিদ প্রজাতি ,যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর করতে সক্ষম। আর এই কারনেই এই উদ্ভিদ প্রজাতি ওয়াকিং পাম নামে পরিচিত ।বিজ্ঞানের পরিভাষায় এর নাম ‘ সক্রেটিয়া এক্সোরিজা ‘ বা ‘ক্যাশাপোনা ‘ ।

ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে100 কিমি দূরে সুমাকো বায়োস্ফিয়ারে দেখা মেলে এই ক্যাশাপোনা পাম গাছের । সত্তরের দশকের শুরুতে এই সংরক্ষিত অরণ্যে গবেষণাকালে এই উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পান স্লোভাক ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এর গবেষক পিটার ভ্রানস্কি । তিনি সেই সময় দাবী করেন , তাঁর আবিষ্কৃত এই উদ্ভিদটি স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম ।কিন্তু বিজ্ঞানীমহলে তাঁর এই দাবী সেই সময় মেনে নেওয়া হয়নি ।

এরপর ১৯৮০ র সময় কালে জীববিজ্ঞানী জন এইচ বোদলে এই অরণ্যতে অবস্থান কালে এই উদ্ভিদের জীবন পদ্ধতি এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন ।তখনই এই চলমান উদ্ভিদের অস্তিত্বের কথা বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয় । কিন্তু কীভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে এই গাছ ?

সাধারণভাবে১৮ – ২০ মিটার বা ৬০ – ৭০ ফুট লম্বা হতে পারে এই উদ্ভিদ। আর এই উদ্ভিদের বাহ্যিক গঠনের মিল দেখা যায় ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ সুন্দরী গাছের সঙ্গে। সুন্দরী ম্যানগ্রোভ হওয়ায় এতে যেমন শ্বাসমূল বা ঠেসমূলের উপস্থিতি দেখা যায় , ওয়াকিং পামের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম ।

ইকুয়েডরের যে অঞ্চলে এই গাছের অবস্থান সেই অঞ্চলের মাটি খুব আলগা , ফলতঃ জলধারণ ক্ষমতা খুব কম, উপরন্তু গহীন অরণ্যে সূর্যালোক সবসময় প্রবেশ করতে পারে না । আর তাই অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় এই গাছ । প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ওয়াকিং পামের শিকড়ের দৈর্ঘ্য অন্যান্য গাছের থেকে বড়ো হয় । যা আয়তন বা পরিধির দিক থেকেও যথেষ্ট মোটা হয় ,অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো ।পাশাপাশি অতি দ্রুত নতুন নতুন ঠেসমূল তৈরী করতে সক্ষম এই ওয়াকিং পাম ।একদিকে এই নতুন ঠেসমূল থেকেখুব দ্রুত তৈরী হয় নতুন উদ্ভিদ তেমনই পুরোনো ঠেসমূল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গাছের গা থেকে ।ফলতঃ গাছের মূল কান্ড ধীরে ধীরে সরে যায় মূল অবস্থান থেকে ।এইভাবেই প্রতিদিন অল্প অল্প করে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ ।

পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই সেন্টিমিটার সরণ হয় এই গাছের । কখনও এই সরণ তিন সেন্টিমিটার হতেও দেখা গেছে । ফলতঃ এক বছরে নিজের অবস্থান থেকে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যায় এই গাছ। এই গাছের শিকড়গুলো পর্যাপ্ত মাটির অভাবে উপরে উঠে আসে এবং ছড়িয়ে যায় । যা থেকে নতুন গাছ জন্ম নেয় । আমাজনের আদিবাসীরা এই হাঁটা পাম গাছকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে এবং এই গাছের হলুদ ফল তারা খায় ।তাছাড়া শিকড়গুলো এফ্রিডিসিয়াক এবং হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ।
এই অমূল্য গাছ নিয়ে আরো বেশি বেশি করে চর্চার প্রয়োজন আছে বলেই মনে হয়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।