দেশ

‘অভিন্ন দেওয়ানী বিধি’ ও ভারত।।


চৈতালি নন্দী, বিশেষ প্রতিবেদন:চিন্তন নিউজ: ১৬/০৭/২০২৩:– অভিন্ন দেওয়ানী বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউ সি সি) হচ্ছে নাগরিকদের ক্ষেত্রে এক অভিন্ন ব‍্যক্তিগত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রস্তাব যা সকল ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে  ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। ভারতে বর্তমান বিজেপি সরকার দেশজুড়ে এমনই একটি অভিন্ন সিভিল কোড চালু করতে চাইছে যা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব আইন ও রীতিনীতিকে লঙ্ঘন করবে। ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজস্ব ধর্মীয় আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলার মৌলিক অধিকার রয়েছে ,এই আইনটি তাতে সরাসরি আঘাত করবে।

এদেশে অসংখ্য ব‍্যাক্তিগত আইন রয়েছে। এমনকি একই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপধারার মধ‍্যেও রয়েছে পরস্পরবিরোধী  বিভিন্নতা। ভারতের সংবিধান কেবলমাত্র বৈচিত্রের কথাই বলেনি,স্বীকৃতি দিয়েছে এর বহুত্বকেও।  বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক, রক্ষণাবেক্ষন সহ রয়েছে ভিন্ন  ভিন্ন নিজস্ব আইন। শুধুমাত্র হিন্দু বা মুসলিমদের নয়, আদিবাসী ও জনজাতিদের নিজস্ব রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান ও পোষাক পরিচিতির সংরক্ষণের যে অধিকার ষষ্ঠ তফসিলে দেওয়া হয়েছে এই আইনে তাও  লঙ্ঘিত হবে।  সমাজের মধ‍্যে বিদ‍্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম‍্যগুলো  সচেতনভাবে এড়িয়ে গিয়ে এই আইন প্রণয়ন করলে বিরূপ  প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা। ২০২১ সালের আইন কমিশনও অভিন্ন দেওয়ানী বিধির স্বপক্ষে মত দেয়নি।

ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্রের বদলই বিজেপির মূল লক্ষ্য। সংখ‍্যাগরিষ্ঠতার জোরে মৌলবাদী, ফ‍্যাসিস্ট হিন্দু রাষ্ট্র গঠনই আসল পরিকল্পনা। আগামী নির্বাচনে বিজেপির প্রধান হাতিয়ার মেরুকরণ, যাকে সামনে রেখে পার করতে হবে নির্বাচনের বৈতরণী।শুধুমাত্র হিন্দ মুসলিম নয়, আদিবাসী, বিভিন্ন জনজাতি সহ প্রগতিশীল মানুষদের মধ‍্যেও যদি তৈরী করা যায় কাঙ্খিত বিভাজন তবে নির্বাচনের প্রাক্কালে এড়িয়ে যাওয়া যাবে অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর। নির্বাচনের আগে অত‍্যন্ত পরিকল্পিত ভাবেই বিজেপি  খেলতে চলেছে এই মেরুকরণের তাস, যা আগামীদিনে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দলগুলির সামনে বড় চ‍্যালেঞ্জ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।