কলমের খোঁচা

‘কত অজানারে—অস্ট্রেলিয়ার “ডি’মক্রেসি সসেজ”।


প্রতিবেদনে মধুমিতা ঘোষ:- চিন্তন নিউজ: ২৯/১১/২০২৩:- একটি ভালো খবর– সসেজ তো আমরা ছোট বড় সবাই কম বেশি খেয়েছি। কিন্তু ” ডি’মক্রেসি সসেজ”! এই নামে কি কোন সসেজ সত্যি – ই আছে? সাধারণত আমরা “সসেজ” বলতে বুঝি, একটি খাবার যা ছোট টুকরো টুকরো মাংস , মসলা ইত্যাদির মিশ্রণে লম্বা আকারে বানানো হয়, এবং ঠান্ডা বা রান্না করে দুভাবেই খাওয়া হয়।

এখন ” ডি’মক্রেসি সসেজ”সম্বন্ধে একটু বিস্তারিত দেখা যাক। অস্ট্রেলিয়া, যে দেশ ১৯০১ এর ফেডারেশন থেকে একটা শক্তপোক্ত উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সিস্টেম তাদের সংবিধান অনুযায়ী ধরে রেখে পৃথিবীতে দুই পার্টি সিস্টেমে সবচেয়ে পুরনো ধারাবাহিক গণতন্ত্র রক্ষাকারী দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের ছয় নম্বরে রাখে, সেখানে দেশের রাজনৈতিক সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যেক নাগরিকের বাধ্যতামূলক।

তথ্যসূত্র বলছে প্রতি ১০০ জনে ৯২ জন ভোট দেন অস্ট্রেলিয়ায়। আমাদের গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের মতোই বেশিরভাগ ভোট গ্রহণ কেন্দ্র বিদ্যালয় গুলোতেই। তবে ভারতে ভোটদান কেন্দ্রগুলো সে বিদ্যালয় বা যেকোনো স্থানই হোক পুলিশ মিলিটারির ঘেরাটোপে ভয়-ভীতি উদ্রেক কারী হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ভোটের দিন (যেহেতু বাধ্যতামূলক ভোট দান) বিভিন্ন শ্রেণীর ভোটারদের জন্য (বিশেষত যারা ক্ষুধার্ত/দরিদ্র) স্কুল গুলোতে রান্না করা সসেজ অল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম ভোটারদের মূল্যে স্কুলগুলো তাদের ফান্ড বাড়ানোর একটা সুযোগও পেয়ে যায়। গণতান্ত্রিক অবস্থা কে টিকিয়ে রাখতে এবং ভোটদানের দিন দেশের সর্বত্র এই তথাকথিত এক ধরনেরই” সসেজ”দেওয়া হয় বলে একে বলা হয়”ডি’মক্রেসি সসেজ”। অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি পোলিং বুথে এই জনপ্রিয় দৃশ্য সর্বব্যাপী। আহা! কি সুন্দর দৃশ্য। গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সব মানুষের একই রকম খাদ্য গ্রহণ প্রায় একসাথেই। ভাবা যায় এ ব্যবস্থা ভারতবর্ষে!

পোলিং বুথে সবচেয়ে গুরুগম্ভীর দায়িত্বপূর্ণ কাজটি সব বয়সের (বিশেষত অল্প বয়সি রাই বেশি করে) ভোটাররা এক হাতে ব্যালট পেপার এবং অন্য হাতে সসেজ কিনে গল্প মজা করতে করতে, জাত পাতের চিন্তাকে বিসর্জন দিয়ে, ধর্মীয় বাতাবরণকে দূরে সরিয়ে সরকার নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে করে ফেলে। একদম শেষে আসি তাহলে। “ডি’মক্রেসি সসেজ” বলতে বোঝা গেল যে শিকে গেঁথে টুকরো টুকরো ঝলসানো মাংসের লম্বাটে আকারে বানানো সসেজ যা তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রুটির টুকরোয় টমেটো সস এবং কখনো কখনো পিঁয়াজের টুকরো সহযোগে অস্ট্রেলিয়ার পোলিং বুথ গুলোতে ভোটের দিন পরিবেশিত হয়ে থাকে।
এখন যদিও সসেজ অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের দিনগুলোতে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে কিন্তু”ডি’মক্রেসি সসেজ”এই নামে এটি প্রথম ২০১২ তে নথিভুক্ত হয় এবং তখন জুলাইয়ের ফেডারেল নির্বাচনে এটি বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় অভিধান কেন্দ্র এই “ডিমক্রেসি সসেজ” শব্দটি একটি জনপ্রিয় ইলেকশান ডে’র প্রধান খাদ্য হিসেবে নথিভুক্ত করে ২০১৬ তে।
ভোট দানের দিন ভোট দান কেন্দ্রগুলোতে এই ব্যবস্থা যতদিন গণতন্ত্র ততদিনই অস্ট্রেলিয়ায় চলতে থাকুক এবং গণতান্ত্রিক শান্তি বজায় থাকুক।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।