নিজস্ব প্রতিবেদনে মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ: ৫ই আগস্ট:- রামমন্দিরের স্বপক্ষে কোনো তথ্য নেই। রাম ইতিহাসের চরিত্র না হ’লেও তার নামে অযোধ্যাতে একটি মন্দির থাকতেই পারতো। প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে তুলসীদাস পর্যন্ত উত্তরভারতের বিশাল সাহিত্য সম্ভারে রাম মন্দিরের কোনো প্রমাণ নেই। প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যও কিছুই নেই। নেই তো এতোকিছু তবে আছে কী? যার জোরে আস্ত একটা মসজিদ ভেঙে ফেলা হলো। চলুন একটু ইতিহাস পথ হাতরাই।
সেকুলার নেহেরুর আমলে, বিশ্বের ভারীতম ও বৃহত্তম গ্রন্থ প্রকাশের একমাস আগে ১৯৪৯ সালে ডিসেম্বর মাসে, যখন চোরাগোপ্তা পথে মসজিদে রামসীতার মূর্তি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে তো সেখানে স্থায়ী আসন লাভ করল। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপিত হলো। তখনও সেকুলার দেশের এলাহাবাদ উচ্চ আদালত। বলেছিল,মূল দরজায় তালা থাকলেও, খিড়কির দরজা দিয়ে মূর্তিপূজা চলবে কিন্তু নামাজ পড়া বন্ধ। খুবই নিরপেক্ষ রায়!
রাজীব গান্ধী, যাঁর ইন্দিরা পুত্র হওয়াই একমাত্র যোগ্যতা ছিলো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার, তিনি গুছিয়ে হিন্দুত্বের তাস খেললেন। তিনি তালা খুলে দিলেন পূজার জন্য, নামাজের জন্য নয়। হিন্দু মৌলবাদ তখন থেকেই সমস্ত মণীষীদের শিক্ষাকে উড়িয়ে দিয়ে শিলালিপির নামে জালিয়াতি করে, তথ্য হনন করে, সাম্রাজ্যবাদী সাক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে , স্থাপত্য প্রমাণকে নস্যাৎ করে ও পশ্চাদবলোকন শিক্ষাকে হাতিয়ার করে জনমত গড়ে তোলে ৬ ই ডিসেম্বর ভারতীয় ঐতিহ্যে আঘাত হানলো।
চার্লি চাপলিনের এক সিনেমার নায়ক বলেছিলেন, ‘দু’চারটে লোক মারলে তুমি খুনী বটে, দু’চার হাজারি লোক মারলে তুমি নায়ক রটিবে’ এখানেও তাই। পাড়ায় কিছু ভাঙলে পুলিশ ধরবে কিন্তু ঐতিহ্য গুঁড়িয়ে দিলে তুমি বীর। তাই বীরেরা পূজিত হচ্ছে ,শাস্তি হচ্ছে না।
আদালতের কাছে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণযোগ্য নথি না থাকায় বিশ্বাসের ওপর রায় দিল যা ভবিষ্যতে পুনপোর্যালোচনাযোগ্য হয়ে রইলো। যদিও গণতন্ত্রের উদ্বায়ু দেশে এটাই স্বাভাবিক। আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ কারো কোনো স্বাধীনতা নেই। সবই অঙ্গুলিহেলনে চলে।
পৃথিবীর নানা দেশে শাসক যখন মহামারী নিয়ে উদ্বিগ্ন, আমাদের দেশে তখন শাসক বির্তকিত স্থানে মন্দিরের ভীতপূজা নিয়ে ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই আমরা মহামারীতে প্রথম স্থান অর্জন করতে চলেছি। যদিও যে শাসক স্বাস্থ্যসেবার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে এহেন কাজ করে জনসমর্থন পেতে চায়, সে দেশে শ্রমিকসমেত কেউ ভালো থাকতে পারে না। এমনকি পূজারীরাও নয়।
কিন্তু আমরা যারা মণীষীদের দেখানো পথে চলার চেষ্টা করি, নিজেদের যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনষ্ক বলি, তারা কেন মেনে নেবে এই কাজ? আমরা রেনেসাঁ নিয়ে গর্ববোধ করবো আবার অমানবিক কাজকে মেনেও নেবো – তা হয় না। তাই আসুন সোচ্চার হই। নইলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।