চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ: ২৬শে অক্টোবর :–হিন্দুস্তান মোটর্সের গাড়ি কারখানায় উৎপাদন শুরুর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ।।
পূর্ব ভারতের গাড়ি কারখানা হিন্দমোটর এখন ইতিহাস।এদের উৎপাদিত গাড়ি অ্যামবাসেডর এর জনপ্রিয়তা একসময় আকাশ চুম্বি হলেও তা এখন অতীত।১৯৪২ সালে বি এম বিড়লার হাত ধরে এই কারখানার পত্তন হয়।গাড়ির নকশা ব্রিটিশদের মরিস গাড়ির মতো হলেও এটি মূলত একটি ভারতীয় গাড়ি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।এই জনপ্রিয়তার কারনে গাড়িটি’ কিং অব ইন্ডিয়ান রোড’ তকমা লাভ করে।
২০১৪ সালে ১৪ ই মে বন্ধ হয়ে যায় এই ঐতিহ্যমন্ডিত কারখানাটি। অতর্কিতে গেটে ঝোলানো হয় ‘ সাসপেনসন অব ওয়ার্কে’ নোটিশ।শ্রমিক কর্মচারীরা এর বিরোধীতা করে কোর্টে যান।সেই মামলায় হাইকোর্ট শ্রমিকদের পক্ষে রায় ঘোষণা করে।’সাসপেনসন অব ওয়ার্ক’ বেআইনি ঘোষণা করা হয়।এর পরবর্তী কালে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করে ও নির্দেশ দেয় যে যতদিন পর্যন্ত এই মামলার পুরোপুরি নিষ্পত্তি না হচ্ছে ততদিন এই কারখানার জমি ও মেশিনারিজ কোনো ভাবেই হস্তান্তর করা যাবেনা।
হাইকোর্টের এই নির্দেশ কে লঙ্ঘন করে কারখানা কর্তৃপক্ষ সরকারি মদতে গোপনে কারখানার যন্ত্রাংশ বিক্রি ও পাচার করা শুরু করে।অনেকক্ষেত্রে তারা কর্মীদের হাতে ধরাও পড়ে। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশ অমান্য করার বিরুদ্ধে ,রাজ্য সরকারের তরফে কোন সহযোগিতা কর্মীরা পায়নি।এর মধ্যেই১১ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তে কর্তৃপক্ষ পিএসএ গ্রুপকে কোম্পানির ব্র্যান্ড ও লোগো বিক্রি করে দেয় ৮০ কোটি টাকার বিনিময়ে। গুজরাট থেকে অ্যামবাসেডর গাড়ি তৈরীর পরিকল্পনা হয়।ইতিমধ্যে ‘সাসপেনসন অব ওয়ার্কের ‘ নোটিশ ঝুললেও ভিআরএস এর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানার লেবার কোয়ার্টার গুলো নিষ্প্রদীপ জেগে থাকে। জলের জন্যে একমাত্র ভরসা পৌরসভার গাড়ি।
কিন্তু অবস্থা বরাবর এমন ছিল না। বাম আমলে সরকারি গাড়ি মানেই ছিল অ্যামবাসেডর। যে কোনো সরকারি কাজেই এই গাড়ি ব্যবহার করা হোতো। লক্ষ্য ছিল পূর্বভারতের একমাত্র গাড়ি কারখানাটি যেন দূর্বল না হয়ে পরে। মন্ত্রী থেকে আমলা ,সকলেই ব্যাবহার করতো অ্যামবাসেডর। কিন্তু ২০১১ র পরিবর্তনের পর কারখানা টির ক্ষয় শুরু হয়। মা মাটি মানুষের সরকার নিয়ে এলো বিলাসবহুল গাড়ি, সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্যে।প্রথম পেরেকটি পোঁতা হয়ে গেল।
সম্প্রতি হিন্দমোটর কারখানার সাসপেনসন অব ওয়ার্ক প্রত্যাহার করে উৎপাদন চালু করার জন্যে শুরু হয়েছে শ্রমিক বিক্ষোভ।সিআইটিইউ ,এসএসকেইউ সহ আইএনটিইউসি,এসএসইউ,আইএফটিইউর যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়।অবিলম্বে খুলতে হবে কারখানা।, শুরু করতে হবে উৎপাদন এই দাবীতে গত বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মধ্যেই শ্রমিক কর্মচারীরা মিছিল করে হাওড়া স্টেশন থেকে বিড়লা হাউসে পৌছে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।এতে উপস্থিত ছিলেন সিটু জেলা সম্পাদক অসিত মুখার্জি, কারখানার ইউনিয়নের সম্পাদক মলয় সরকার ,আইএনটাইউসি র রাজ্য সম্পাদক কামারুজ্জামান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।এই সভায় মহিলা দের উপস্থিতি ছিল উল্লেখজনক। শ্রমিক নেতা মলয় সরকারের নেতৃত্বে বিভিন্ন নেতারা স্মারকলিপি জমা দেন।
ইতিমধ্যে গাড়ি কারখানার জমিতে শুরু হয়ে গেছে পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ আবাসন প্রকল্প।কারখানাটির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা না করে এই সরকার বরাবরের মতো তাতে মদত যোগাচ্ছে।কিন্তু শ্রমিকরা হাল ছাড়বেনা….লড়াই জারি আছে।