কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৫শে এপ্রিল:–স্বাস্থ্যদপ্তরের নয়া তুঘলকি ফরমান মোবাইল নিয়ে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালের ভিতরে যাওয়া নিষেধ। আজব এক রাজ্য, যেখানে করোনা মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা সেখানে মাননীয়া ব্যস্ত বিভিন্ন কমিটি গঠন করে তথ্য গোপন করতে। সে করোনায় মৃত রোগীর সংখ্যা বা কোয়েরেন্টাইনে থাকা নজরবন্দি মানুষের সংখ্যাই হোক। অসহায় চিকিৎসক, নার্স , স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষ।
বাঙুর হাসপাতাল, আর জি কর, হাওড়া ডুমুরজলা ষ্টেডিয়ামের কোয়েরেন্টাইনের ভয়াবহ চিত্র সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে লক্ষ লক্ষ মানুষ জেনে গেছেন। ওয়ার্ড, বাথরুম সর্বত্র নোংরা-আবর্জনা, ভাঙাচোরা বাথরুম, জলের অপ্রতুলতা, রোগী ও বিড়াল কুকুরের সহাবস্থান। বাঙুরে ভর্তি এক বেসরকারি নার্সিংহোমের নার্স ফোনে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ন্যুনতম পরিষেবা না পাওয়ার কথা।
ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে কোয়েরেন্টাইনে যাঁদের রাখা হয়েছে তাঁদের দিনে মাত্র দুবার একই খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে যা মুখে দেওয়ার অযোগ্য, পচা ডিম ও জুটছে। এঁরা কেউই স্বেচ্ছায় নয় সরকারি নির্দেশে গেছেন। সরকারের দায়িত্ব যথাযথ সুরক্ষা ও খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। করোনা না হলেও অন্য রোগ নিয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন।
এমনিতেই করোনা আক্রান্ত রোগী বা কোয়েরেন্টাইনে থাকা মানুষের সঙ্গে পরিবারের পরিজনের দেখা করার অনুমতি নেই, যোগাযোগের মাধ্যম একমাত্র ফোন। রোগের সংক্রমণ রোধ করাই যদি একমাত্র কারণ হয় তাহলে ল্যান্ডফোন বা ইন্টারকম তো অনেকে ব্যবহার করবেন—-সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।
মূল কথা হল সরকারের অপদার্থতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল চিত্র লুকানো। কিন্তু এই নির্দেশিকার ফল হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। দেখা না হোক মোবাইলের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়া, কথা বলে যে মানসিক শক্তি রোগী পেতেন তা আর সম্ভব হবে না, একাকীত্ব গ্ৰাস করবে। এই সব শুনে রোগ চেপে রাখার প্রবণতা ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাবে। কেউই চাইবেন না হাসপাতাল নামক নির্বাসন বা কোয়েরেন্টাইনে যেতে। সুতরাং রোগের প্রকোপ আরও বাড়বে, মহামারীর আকার ধারণ করবে। সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার।