দেশ

নাগরিকত্ব আইনের সক্রিয় প্রতিবাদে শাহিনবাগের দাদিরা


মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:৪ঠা জুলাই:– জাতীয় নাগরিকত্ব আইন – (Citizenship Amendment Act) বা সিএএ নিয়ে ভারতবর্ষ উত্তাল। যে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর সেই সরকারের সমস্ত দপ্তর বা মন্ত্রীরাও সঠিক ভাবে জানেন না, কোন পদ্ধতি অবলম্বন ক’রে তারা কি করতে চান! জনগনের কাছে এটা স্পষ্ট যে, সরকারের এই আইন আসলে এক সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক এবং জনগণের অধিকার হরণের একটি নিকৃষ্ট পদক্ষেপ।

দেশের সর্বত্র বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সংগঠিত ভাবে যখন নাগরিক বিল নিয়ে পথে নেমেছেন তখন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দিল্লির শাহিনবাগের অশীতিপর বৃদ্ধারা! নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়ে যাঁরা মানুষের স্বতস্ফূর্ত সম্মানে দাদি(Dadis of Shahinbag) নামে খ্যাত হয়েছেন! বিশেষ তিন দাদি আশমা খাতুন, বিলকিস বেগম ,এবং শবরী দেবীর চরম লড়াকু মানসিকতা তাদের বয়সকে তুচ্ছ করেছে! তাদের তিনজনের একই বক্তব্য , যে তারা তাদের নাম সাকিন, ঠিকানা, কোনো তথ্যই দেবেন না! এত বছর পর যদি কোনো তথ্য দেন তবে তা সরকারের নিয়মে তাদের বিরুদ্ধে যাবে!

নবতীপর বৃদ্ধা আশমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, নরেন্দ্র মোদিকে জিজ্ঞেস করুন কেন আমরা বিক্ষোভে সামিল। আমরা এই “ক্যা” এর বিরুদ্ধে। তিনি এই আইন প্রত্যাহারের দাবি তুলে বলেন দেশের বহু মানুষের বন্যা খরা বৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নথি নষ্ট হয়ে গেছে তারা তাদের প্রমাণপত্র কোথায় পাবেন? জোর দিয়ে এই দাদি মোদিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, মোদি তার সাত পুরুষের নাম বলুক। তিনি অনায়াসে তার নয় প্রজন্মের নাম বলতে প্রস্তুত!

বিলকিস দাদি বলেন তাদের বিক্ষোভের পরিবেশটি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মোদি মুসলিম বিরোধী বিল আনতে চাইলেও সব ধর্মের মানুষ এর বিপক্ষে। শুধু মুসলিমরাই নয় সকল শ্রেণীর মানুষ বিক্ষোভে সামিল । মানুষদের খাদ্য/ জল দিয়ে যেভাবে সাহায্য করছে তা প্রমাণ করে এ লড়াই জনগনের লড়াই !

সর্ব কনিষ্ঠ দাদি ৭৫ বছরের শবরী দেবী বলেন আমরা এদেশে জন্মেছি , এ দেশেই মরতে চাই। কোনো কাগজের টুকরো আমাদের এই অধিকার হরণ করতে পারবে না! সরকারের এই আইন বিভাজন মূলক। নাগরিকত্ব লাভ কোনোদিন ধর্মভিত্তিক হতে পারে না! এই আইন ভারত রাষ্ট্রের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে লঙ্ঘন করছে।

দিল্লির এই ভয়ংকর হাড় কাঁপানো শীতে খোলা আকাশের নীচে অতি বৃদ্ধা দাদি দের এই অভিযান শুধু যে তাদের মনের জোর প্রমাণ করে তাই নয়; আগামী প্রজন্মের কাছে এ এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন। তারা বলতে চান মানুষের সমর্থনই তাদের মনোবলের কারণ। তাঁরা আরও বলেন তাঁরা নিজেদের জন্য নয়, সারা দেশে এই আইন কার্যকর হতে হতে তারা বেঁচে না ও থাকতে পারেন, কিন্তু আগামী প্রজন্ম কে দেখিয়ে যেতে চান অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে দাদি নানিরা ও পথে নামতে পারেন।

কেন্দ্র সরকারের অন্যায় অনৈতিক কালা কানুন যে দেশের সর্বস্তরে, সর্বশ্রেনীর, সব বয়সের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে তার উজ্বল নিদর্শন শাহিনবাগের দাদি দের সক্রিয় প্রতিবাদ! বর্তমানে দেশে “ক্যা” বিরোধী যে কোনো সংগঠিত বিক্ষোভের পাশে শাহিনবাগের দাদি দের এই মনোবল, এই অদম্য প্রাণপ্রাচুর্যকে দেশবাসীর কুর্নিশ।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।