চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ: ৩রা জানুয়ারি:–নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে কি বলেছেন জেএনইউ এর ইতিহাসের অধ্যাপিকা তনিকা সরকার!!
তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে চষে ফেলছেন দিল্লির অলিগলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুবাদে তিনি অনেক আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছেন।ছাত্র আন্দোলনকেও দেখেছেন খুব কাছ থেকে। এই প্রথম কোনো আন্দোলনকে গনআন্দোলনে পরিনত হতে দেখছেন,জাতি ,ধর্ম, নারী ,পুরুষ নির্বিশেষে ।অতি অল্পদিনেই যার ব্যাপ্তি ও গভীরতা অবিশ্বাস্য।যেন দীর্ঘ নীরবতার পর হঠাৎ গণবিষ্ফোরণ…কাশ্মীরে ৩৭০ধারা থেকে অযোধ্যার রায়,যা মানুষকে গভীর ভীতি থেকে আলোয় নিয়ে এলো…বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের রাহুমুক্তি ঘটলো,যেন ফিরে পেলো বাক স্বাধীনতা।উত্তরপ্রদেশ, কাশ্মীর মেঙ্গালুরু সর্বত্রই একই ছবি।
এই পরিস্থিতিটা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরের আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।সেসময় ঐ ঘটনার বিরুদ্ধে প্রচারে গিয়ে হিন্দুত্ববাদী দের ঘৃনীত চাউনি থেকে মুসলিম দের রক্ষা করাই ছিল অন্যতম কাজ।সেসময় সরকার বিরোধী বক্তব্য যে সাধারণের মধ্যে যে রোষের সঞ্চার করতো,এখন তা নেই।এই আন্দোলন যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত গন আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে ,তা অভূতপূর্ব।
কিন্তু এই পরিস্থিতি যে হঠাৎ তৈরী হয়েছে তা নয়।বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এই লড়াই সে ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গের ‘মতো।পড়ে পড়ে মার খেতে কেউ রাজী নয়।প্রকৃতপক্ষে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।যদিও এভাবে আন্দোলনের ঝুঁকি রয়েছে প্রতিপদে।এর অভিমুখ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার বিপদ রয়েছে।যে ব্যাপারে অত্যন্ত পরিণত আএসএস। দীর্ঘদিন আরএসএস নিয়ে চর্চা করা ,অধ্যাপিকা সরকার বলেন,এরা আটঘাট বেঁধেই রনক্ষেত্রে নামছে।মানুষের মগজধোলাইয়ের ঠিক কি কি অস্ত্র তাদের কাছে রয়েছে ,তার তল পাওয়া কঠিন।কতো বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রূপে তাদের সংগঠন ছড়িয়ে রয়েছে তার ধারণা পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য।সাম্প্রদায়িক অশান্তি ,গুজব, অপপ্রচার, নকল ভিডিও, পাঠ্য বইয়ে ভূল ইতিহাস ,বাড়ি বাড়ি মিথ্যে প্রচার ইত্যাদি বহু অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে।তার প্রয়োগ মাঝেমধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়।
তাঁর মতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধী মুখ।সেই কারনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গকে নিশানা করেছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে ২০০৫সালে মমতা ব্যানার্জীই এনআরসি র দাবী তুলেছিলেন পার্লামেন্টে।এরপর ডিটেনশন ক্যাম্পের জন্যে জায়গার বন্দোবস্তও রাজ্যে এনপিআর এর প্রস্তুতি তিনিই নিয়েছিলেন।সীমান্তবর্তী এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা রাজ্যকে ও বামপন্থীদের শক্তিহীন করে দেওয়ার লক্ষ্যে এখানে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় মরীয়া বিজেপি। দেশভাগের ক্ষত পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যেই সবচেয়ে প্রকট।সেই কাঁটাতারের ক্ষতর পুনরাবৃত্তি থেকে বাঁচতে ও অধিকার ফিরে পেতে মরীয়া ভারতবর্ষ তথা বাঙলার মানুষ।